আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০১৪

LHCডেকে আনবে কি পৃথিবীর ধ্বংস নাকি সমাধান::[পর্ব--৪] সমাপ্ত



LHC : Large Hadron Collider। এর মধ্যে আমরা মোটামুটি প্রথম শব্দ আর শেষ শব্দ নিয়ে কথা বলেছি। এই মধ্যপদটির মানে কি?
নিউক্লিয়াসের মাঝে যারা ঘাপটি মেরে আছেন---প্রোটন আর নিউট্রন----তারা আবার ছোট ছোট কিছু কণা দিয়ে তৈরী, যাদের Quark বলে। তো, যারা কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি(প্রোটন, নিউট্রন) তাদের একটা সাধারন নাম হল Hadron (গ্রীক adros থেকে এসেছে যার মানে 'ভারী')। নিউক্লিয়াসের বাইরে যারা আছেন--- ইলেক্ট্রন এবং  আরো কিছু কণিকা যেমন মিউওন,যেগুলো কসমিক রশ্মি তে পাওয়া যায়---এরা আবার কোয়ার্ক দিয়ে তৈরী নয়। এদের তাই অন্যনাম---Lepton(গ্রীক leptos মানে,----ঠিক ধরেছেন 'হালকা')।
আমাদের LHC তে প্রোটন ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই জন্য নামের মাঝে Hadron। নামকরনের সার্থকতা বোঝা গেল?

যেহেতু হাতে সময় বেশি নেই কাজেই জলদি করে মূল প্রসঙ্গে চলে আসি। LHC আমাদের কি কাজে লাগবে? কেনই বা একে নিয়ে এত্ত হইচই।
কারন গুলো একে একে বলি তাহলে?
প্রথম কারনঃ
আমাদের আশে পাশের চেনা জগৎটা শাসন করছে---না, শুধু প্রেম আর ক্ষুধা নয়, চারটি 'আদি' বল। আর যত প্রকারের বল ও বল প্রয়োগের ঘটনা আমরা অবলোকন করি (হ্যা, হ্যা, ছোটবেলায় ইস্কুলে স্যারেরা আপনার কানে যে বল প্রয়োগ করেছিলেন, সেটাও) তার সবই কিন্তু এই চারটি বলের সন্নিবেশনে তৈরী। বল গুলো হল যথাক্রমে :
Strong force:এইটা প্রোটন-নিউট্রনের মাঝে কাজ করে।
Weak force: এর জন্যে আকাশ ভরা সুর্য তারা আমাদের আলো বিলায়। এদের শক্তির উৎস হল এই বল।
Electromagnetic force: এ আমাদের চেনা জিনিস, বিদ্যুত আর চুম্বকের ব্যাপার।
Gravitational force: এইটা হল আমাদের সবচাইতে চেনা বল---মহাকর্ষ। এই বলের জন্যই আপনি ছোটবেলা বরই চুরি করতে গিয়ে গাছ থেকে ধপাস হয়েছিলেন
তো, এই চারটি বল কি ভাবে কাজ করে, কিভাবে একে অন্যের সাথে মেলামেশা করে এবং সবচাইতে জরুরি ঘটনা হল---এরা কি কোন সময় একীভুত ছিল? বা এক করা যায়?----এই সব প্রশ্ন নিয়ে যারা দিনরাত দিস্তার পর দিস্তা কাগজ নষ্ট করছেন তারা শেষমেষ একটা মডেল খাড়া করেছেন। সেই মডেলটার কাজ হল এই সব 'অদ্ভূতুড়ে' অশৈলী কাজ ব্যাখা করা। এই মডেলের নাম হল Standard model। LHC এর অন্যতম প্রধান কাজ হল এই মডেল কতটুকু কার্যকরী সেইটা যাচাই করা।
এখন পর্যন্ত Standard Model বেশ ভাল ভাবেই কাজ করেছে এবং কিছু কিছু ভবিষ্যত বানীও করেছে। কিন্তু এইটা অপুর্নাঙ্গ। এই মডেল কিছু কিছু ব্যাপারে ভীষনরকম চুপ। যেমন পদার্থের ভর। Standard Model ব্যাখ্যা করতে পারেনা কেন কিছু কণা ভীষন ভারি আর কেনই বা কিছু কিছু কণা ভর-হীন। একটা ব্যাখ্যা অবশ্য দেয়ার চেষ্টা হয়েছে যেটা Higgs mechanism নামে সমধিক পরিচিত। এইটা আবার কি? Higgs mechanism বলছে যে সারাটা বিশ্ব একটা বিশেষ 'ক্ষেত্রের' মাঝে নিমজ্জিত---Higgs field। আমাদের চেনা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মতই এটা অদৃশ্য কিন্ত তার উপস্থিতি জানান দিতে পারে। ধারনা করা হয়, বিভিন্ন কণা বিভিন্ন ভাবে এই Higgs field এর সাথে ঘষাঘষি করে। যার খাতির যত বেশি---সে তত ভারী। এই বিশেষ ক্ষেত্রের উপস্থিতি জানার উপায় হচ্ছে---একটা বিশেষ রকমের নতুন কণা আবিষ্কার করা যার নাম হলো higgs boson। Standard model যদি ঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমাদের LHC কিন্তু Higgs boson আবিষ্কার করবে !!! Standard Model এর অনুসারীরা নিশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষায় আছেন---অনেকে নানা জায়গায় নতুন চাকরীর জন্য আবেদন করছেন শোনা যাচ্ছে।
দ্বিতীয় কারনঃ
আমাদের যে চারটি মুল বলের কথা বলা হয়েছে ---ধারনা করা হয় এরা আদতে একটা বলের প্রকারভেদ। বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন সৃষ্টির মুহুর্তের কিছু পরেই এই 'একীভুত একমেবাদ্বিতীয়ম' বলটি দেখা দেয় এবং এর কিছু পরে অবশ্য সেটা বাকী চার অংশে ভাগ হয়ে পড়ে। ঠিক কতটুকু সময়ের মাঝে এইটে ঘটেছিল? বিজ্ঞানীদের ধারনা সৃষ্টি মুহুর্তের অর্থাৎ বিগ-ব্যাং এর ১০^(-৪৫) সেকেন্ডের কিছু আগে পর্যন্ত এই super force ছিল--অখন্ড, একপ্রান, একীভুত। ১০^(-৪৫) সেকেন্ড মানে হল ১ সেকেন্ড কে ১ এর পেছনে ৪৫টা শুন্য-ওয়ালা সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যা হবে ---তাই। আপনার নিশ্চয়ি জানা আছে এক সেকেন্ড কতটুকু সময়---'এক' বলাতেই এক সেকেন্ড শেষ।
যাই হোক, চারটি বলের মাঝে তিনটি কে মোটামুটি এক করা গেলেও চার নম্বরটি--মহাকর্ষ--- কিছুতেই মিলতে চাইছে না। এদেরকে একীভূত করার প্রচেষ্টা নিয়ে Supersymmetry নামের এক থিওরী। এ থিওরী সত্যি হলে কিছু বিশেষ কনা দেখতে পাবার কথা।LHC সেইটা খুজবে। আমাদের এই মহাবিশ্বের মাত্র ৪% জিনিসের হিসাব পাওয়া গেছে। এই ৪% হল আমাদের চারপাশে যতকিছু দৃশ্যমান বস্তু আছে, তাদের সবাইকে হিসেবে এনে। তাহলে বাকি ৯৬% ভাগ গেল কই?
বিজ্ঞানীরা বলছেন Dark matter (২৩%) আর Dark energy (৭৩%)  নামের দুইটি জিনিসের কথা। Dark matter বা 'কৃষ্ণ বস্তু' আসলে আমাদের Supersymmetry -র  predict করা কণা। কিন্তু সবচাইতে অস্বস্তির কারন হয়ে আছে dark energy বা 'কৃষ্ণ শক্তি'। এইটি সারা মহাবিশ্ব জুড়ে একেবারে সমান ভাবে ছড়িয়ে আছে---অর্থাৎ কোথাও বেশি কোথাও কম, এমন নয়। ধারনা করা হয় এইটের কারনেই আমাদের মহাবিশ্ব এমন পাগল-পারা হয়ে বেড়ে চলেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের হিসেব করে বলেছেন যে আসলেই এই ধরনের কিছু থাকতে পারে।LHC পরখ করবে তাদের বক্তব্যের সত্যতা।
তৃতীয় কারনঃ
মহাবিশ্ব কেবল বস্তু(matter) দিয়ে তৈরী। কিন্তু নিয়ম বলে সৃষ্টির শুরুতে বস্তু ও প্রতি বস্তু(Anti-matter) সমান সমান ছিল। কিন্তু এখন কেন আমরা কেবল বস্তু গুলো দেখি? তাদের সঙ্গীরা লুকালো কোথায়? LHC জবাব খুজবে এটারও।
চতুর্থ কারনঃ
সাম্প্রতিক থিওরীরা বলছে যে বিগ-ব্যাং এর অব্যবহিত পর, সমস্ত কিছু একটা ঘন থিকথিকে স্যুপের মত ছিল। এই স্যুপের নাম হল Quark-gluon plasma বা সংক্ষেপে QGP। আমাদের LHC সেই সৃষ্টি মুহুর্তে আমাদের কে নিয়ে যেতে পারে। কিভাবে? পরস্পরের বিপরীতমুখি দু'টো প্রোটন বিমের বা সীসার বিমের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটিয়ে। এ রকম অবস্থায় LHC এর ভেতরে তাপমাত্রা হবে সূর্যের ভেতরের তাপমাত্রার ১০০০০০ গুন বেশি!!!!
-আর এই তথ্য দিয়েছে আমাদের মাথা খারাপ করে। কি সর্বনাশ!! সুর্যের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা যদি তৈরী হয় তাহলে আমরা টিকব কি করে??
শুধু কি তাই? কিছু কিছু বিজ্ঞানিদের মতে এত প্রচন্ড গতিশীল প্রোটন বিমের সংঘর্ষে তৈরি হতে পারে ছোট ছোট ব্ল্যাক হোল। আর আমরা যেমন জানি---ব্ল্যাক হোলের কাজই হল সব কিছু গিলে খাওয়া। তবে? শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাক হোলের পেটেই কি যেতে হবে?
ভয় পাবার কিস্যু নেই----
বলছেন LHC এর বিজ্ঞানীরা। প্রচন্ড গতিশীল প্রোটনের শক্তি মাপা হয় TeV বা টেরা ইলেক্ট্রন ভোল্টে। সবচাইতে গতিবেগ সম্পন্ন প্রোটনের শক্তি হবে ৭ TeV---যা এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে তৈরী করা যায় নি। কিন্তু প্রকৃত ক্ষেত্রে TeV শুনে ভড়কানোর কোন কারন নেই। TeV কে যদি আমাদের পরিচিত শক্তির মাত্রায় নিয়ে আসি---সেটা হবে এক মশার ওড়ার সময়ে ব্যয়িত মোট শক্তির কাছাকাছি!!!
শেষ কবে আপনি মশার ওড়া দেখে ভয় পেয়েছেন???
LHC এর লোক জন বলছেন,এটা সত্যি যে আমরা 'সৃষ্টি
 মুহুর্তের অবস্থা' তৈরি করতে যাচ্ছি---কিন্তু আপনারা যেটা খেয়াল করছেন না--সেটা হল, গোটা ঘটনা ঘটছে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এক পরিসরে। সংঘর্ষের স্থানের ক্ষুদ্রত্ব আর সেখানে উৎপন্ন শক্তির পরিমান কে যখন আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের আওতায় নিয়ে আসব, তখন দেখব যে এইটা আসলে তেমন কিছুই না। বরং ঠিক এই মুহুর্তে এর চেয়ে অনেক গুন শক্তিশালী
মহাজাগতিক রশ্মি আমাদের পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ছে। আর পৃথিবীর বয়েস জানেন তো? প্রায় ৪৬০ কোটি বছর। এত্তদিনের মহা জাগতিক রশ্মির সংঘর্ষে যখন আমরা ঘায়েল হইনি----তখন পুচকে LHC এর ভয়ে থরিহরি কম্পমান না হলেও চলবে। একথা সত্য যে LHC বেশ বড়সড় শক্তির উদ্ঘাটন করবে---কিন্তু মহাবিশ্বের আরো আরো সব মাস্তানের কাছে এইটা নস্যি।
আর ব্ল্যাক হোল?? হু, সেইটা তৈরি হবে ঠিকই কিন্তু এত স্বল্পজীবি হবে যে তারা প্রায় সাথে সাথেই উবে যাবে এবং বেচারাদের জন্ম হয়েছিল কি না আদৌ--সেটা বুঝতে হবে তারা ধংসের পর আরো কিছু ছোটখাট কনিকার ছূটোছুটি দেখে।
বুঝলেন তো? ভয়ের কিস্যু নেই। আমি আছি না??
ওহ হ্যা ভাল কথা---এসবই কিন্তু আমাদের এখনকার থিওরীর উপর ভিত্তি করে বলা। এগুলো যে ঠিকই তার
কি কোন গ্যারান্টি আছে??