আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৭, ২০১৪

আমরা ভর পেলাম কিভাবে?

আমরা প্রশ্ন করতে ভালো বাসি।এ পুরো মহাবিশ্ব আমরা সবাই জানি অনুপরমানু দিয়ে সৃষ্টি। তারপর আমরা পাই নিউক্লিয়াস আর ইলেক্ট্রন। ওগুলো কি দিয়ে সৃষ্টি তাহলে সরাসরি বলি আইনস্টাইনের E=mc^2 সবকিছুই এনার্জীর মাধ্যমে সৃষ্টি। কিন্তু এনার্জীর তো ভর বা ওজন নেই তাহলে এত ওজন কিভাবে তৈরী হলো?
তাহলে আরেকটু ডিটেইলে যাই যদি আমরা ইলেক্টরিন প্রোটন ভাঙ্গি তাহলে পঅয়া যাবে কোয়ার্কের প্যাকেট আরও কিছু লেপটন (এখানে ৬ টা কোয়ার্ক আর ৬ টা লেপটন স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে) দিয়ে তৈরী।
এখানে আমরা স্ট্যান্ডার্ড মডেল সম্পর্কে খুব বেশী একটা সচেতন নি। যাই হোউক ছবিতে এটা ডিটেইলে পাবেন!

প্রথম প্রথম মনে হবে কিছু একটা মিসিং, বা সব মিথ্যা। কারন এনার্জী থেকে ভর কিভাবে আসে?
যাই হোউক, আলোচনা একটু এগিয়ে নেই। এখন অনেকেই জানেন হিগস বোসনের নাম। সেটা নিয়েই কথা বলবো!
যেহেতু পার্টিক্যালগুলো এই ভর জিনিসটা নিয়ে বহাল তবিয়তে মহাবিশ্ব বিদ্যমান তাহলে নিশ্চয়ই কাহিনী আছে। তো কাহিনী শুরু হয় অনেকটা এমন ভাবে, ১৯২০ এর দিকে সত্যেন বোস নামের এক লেকচারার ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে লেকচার দেবার এময় একটা আইডিয়া পান: সেটা হলো আলো আসলে ছোট ছোট এনার্জীর প্যাকেট (যাকে পরে ফোটন নাম দেয়া হয়), তো বোস সাহেব প্লান্কের বিকিরন তত্ব থেকে একটা হিসাব দাড়া করান যার মাধ্যমে দুটো ফোটনকে আলাদা বা ভিন্ন ভাবে তাদের দশাকে গননা করা যায়। তো স্যারের এই হিসাবটা আইনস্টাইন অনু দের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেন যেটা পরে বোস আইন্সটাইন পরিসংখ্যান নামে পরিচিত!
যেসব পার্টিক্যাল (যাদের স্পিন সংখ্যা পূর্ন সংখ্যার নয় (হাফ ইন্টিজারের বাংলা কি ভাই?) ) এই পরিসংখ্যান মেনে চলে তাদেরকে বলা হয় বোসন (যেটা সত্যেন বোস স্যারের নামানুসারেই) বলে।
১৯৬৪ এর দিকে একটা জার্নাল প্রকাশিত হয় যেখানে পিটার হিগস নামের এক ভদ্রলোক একটা মডেল তৈরীর প্রচেষ্টা শুরু করলেন যেখানে তিনি এমন একটা পার্টিক্যাল নিয়ে কাজ করতে লাগলেন যেই পার্টিক্যালের গুনাগুন ছিলো এর শুধুমাত্র ভর থাকবে কিন্তু শূন্য স্হানে এ কোনো চার্জ প্রদর্শন করে না। এই পার্টিক্যালটার নাম আমরা H বলতে পারি। এই H পার্টিক্যালটি অন্যান্য পার্টিক্যালের সান্নিধ্যে আসলে এদের মধ্যে একটা বল কাজ করবে।
এখন ধরা যাক এই H পার্টিক্যালটি একটা ইলেক্ট্রনের সান্নিধ্যে আসলো তখন কি হবে? ইলেক্ট্রন নেগেটিভ চার্জের ভরযুক্ত পার্টিক্যাল, নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে একটা বলের আবির্ভাব ঘটবে।
এখন আমরা যদি এভাবে বলি কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সে যখন আমরা মৌলিক পার্টিক্যাল গুলোর ধ্বংস এবং সৃষ্টির হিসাবটা করি গাণিতিকভাবে (যার ব্যাব হারিক প্রয়োগ পাওয়া যায় এক্সিলারেটর বা কোলাইডার গুলোতে ) তখন দেখা যায় সাব এটমিক পার্টিক্যালগুলোর উদ্ভব ঘটে স্হান এবং কালের বিদ্যমান ক্ষেত্র থেকে। হিগস এই গানিতিক মডেল থেকে H এর সাথে সম্পর্কযুক্ত প্যারামিটারগুলোকে এমন ভাবে সাজান যে শূন্যস্হানে ঐ ক্ষেত্রের সবচেয়ে নিম্ন এনার্জী স্তরেরমান ১ হয়। তখন দেখা যায় যে শূন্যস্হানে ঐ ক্ষেত্রের মান আসলেই শূন্য থাকে না কিন্তু ফলাফলে যেটা পাওয়া যায় সব পার্টিক্যাল গুলো H এর সান্নিধ্যে এসে ভর লাভ করে।
এভাবেই গানিতিকভাবে H এর অস্তিত্ব আর তার সাথে যেসব পার্টিক্যালের মিথস্ক্রিয়তায় ভর লাভ করে এই ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই মডেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে ব্যাপারটা সেটা হলো নিম্ন এনার্জী স্তর, শূন্যস্হানে দেখা যায় H পার্টিক্যালের নিজস্ব কোনো এনার্জী থাকে না। অন্যান্য পার্টিক্যাল এই শূন্য-এনার্জীর H পার্টিক্যালের সাথে মিথস্ক্রিয়তার মাধ্যমে ভর প্রাপ্ত হয়। এই ভরকে বলা যায় জড়তা অথবা বস্তুকে গতিশীল করতে বাধা প্রদান করার ক্ষমতা এবং মূলত এভাবে আসে যে পার্টিক্যালটিকে হিগস পার্টিক্যাল দ্বারা অনেকটা আবিষ্ট করাকেই দায়ী করা যায় যখন আমরা একে নড়াতে চাই!
যদি পার্টিক্যাল হিগস ক্ষেত্রের শূন্য স্হানে মিথস্ক্রিয়তা করার মাধ্যমে ভর প্রাপ্তির সুযোগ পায় তাহলে হিগস পার্টিক্যালের অস্তিত্ব থাকতেই হবে, কিন্তু একে দেখে বিনা এটার অস্তিত্বের ব্যাপার নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না। হিগস সম্পর্কে আরও অনেক পটেন্ট আছে যেমন এটা যদি সত্যি থেকে থাকে তাহলে এই কনিকা বিভিন্ন মৌলিক বলের একীভূত করনের পিছনে কাজ করে।
হিগস ক্ষেত্র:
প্রথমে আমরা হিগস ক্ষেত্রটিকে জানতে চেষ্টা করি। বিগ ব্যাং এর পর পর আমাদের চেনাজানা মহা বিশ্ব প্রচন্ড উত্তপ্ত ছিলো, তখন হিগস ক্ষেত্রের প্রচন্ড প্রভাব ছিলো (এখানে পটেনশিয়াল এনার্জী কর্ভ অনুসারে নীচের চিত্রটি অনুসরন করা যেতে পারে)।
At the begining of Big Bang
যখন মহাবিশ্ব প্রচন্ড রকম উত্তপ্ত ছিলো এবং φ = 0
present universe condition
যখন মহাবিশ্ব ঠান্ডা হতে শুরু করলো এবং φ0= (-μ^2/λ)^১/২ = v।
যখন মহাবিশ্ব আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে থাকে অনেকখানি, একটা নির্দিস্ট তাপমাত্রার নীচে এই হিগস ক্ষেত্রটি একটি নির্দিষ্ট মানে পৌছায় যেটা মূলত সর্বনিম্ন এনার্জী স্তরকেই (এখানে পটেনশিয়াল এনার্জী শূন্য হলেও হিগস ক্ষেত্রটির মান শূন্য নয় আর এই লেভেলটাকে বলা হয় শূন্য বা ভ্যাকুয়াম) বুঝায় এবং এই এনার্জী স্তরটি এখন পুরোটা মহাবিশ্বে থেকে যায়।
এখন ধরা যাক একটি কোয়ার্ক বা ইলেক্ট্রন ঘুরতে ঘুরতে এই ইউনিফর্ম হিগস ক্ষেত্রে এসে পড়লো। যদি ঐ পার্টিক্যালটি তার চলার গতি পরিবর্তন করে অর্থাৎ ত্বরনায়িত হয় (এটাই হয় সবসময়), তখন এই হিগস ক্ষেত্রটি একটি নির্দিষ্ট মানের বাধার সৃষ্টি করে যাকে বলা হয় স্হিতির জড়তার উৎস হিসাবে বলা হয়। এটাকে সোজা বাংলায় বলা যায় পার্টিক্যালের সাথে হিগস ক্ষেত্রের মিথস্ক্রিয়তার ফলেই এই স্হিতির জড়তা উৎপন্ন হয় এবং ভরের শুরু এখান থেকেই এবং এর সাথে অন্যান্য মিথস্ক্রিয়া যেমন শক্তিশালী মিথষ্ক্রিয়া (যেটা গ্লুওনের বলের প্রভাবে ঘটে, কোয়ার্কগুলো আঠার মতো লেগে ফোটনের উদ্ভব ঘটায় এমন কিছু বলা যেতে পারে) এই উদ্ভুৎ ভরে সম্পৃক্ত ঘটায়। এখানে বলা যেতে পারে হিগস ক্ষেত্রের বাধার পরিমান নির্ভর করে কি রকম পার্টিক্যালের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে আর এর কারনেই বিভিন্ন পার্টিক্যালের বিভিন্ন ভরের সৃষ্টি হয়।
এখন একটা উদাহরন দেই। দেখা গেলো আপনি আপনার ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী একটা মেয়ে। অনেকদিন পর গেট টুগেদার পার্টির ডাক পেলেন। যেহেতু আপনি কো এডুকেশন পড়েছিলেন সেহেতু আপনার প্রচুর শুভাকাঙ্গি। তো যখন পার্টি শুরু হলো তখন রুম ভর্তি ছেলে মেয়ে। আপনি যখন রুমে ঢুকলেন তখন দেখা গেলো সবাই জেনে গেলো আপনি এখনো সিঙ্গেল। আপনি যত পার্টির ভিতরে যেতে থাকবেন তত আপনার সাথে ডেট করবার জন্য ছেলেরা এগিয়ে আসবে। আর যারা মেয়ে সহপাঠি তারা দূরে দারিয়ে থাকবে। তার মানে দেখা যাচ্ছে আপনি একটা সময় নিঃসঙ্গ থেকে যত ভীড়ের ভিতরে ঢুকছেন আপনি তত মানুষকে আকর্ষন করছেন। দেখা গেলো ছেলেদের দ্বারা সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট হচ্ছেন নতুন ভাবে আর মেয়েরা দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে আপনি তত বেশী মোমেন্টাম প্রাপ্ত হচ্ছেন। যেটা ভর প্রাপ্তির প্রাথমিক লক্ষন! এখন আপনি অনেকবেশী ভর প্রাপ্ত হবেন তখন আপনার সামনে যাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে। আপনি আবার তখনই সামনে যাবেন আগের মতো দ্রুত যখন আপনি আবার নিঃসঙ্গ! এটাই হলো হিগস ম্যাকানিজম।
পিটার হিগস এর উপর ভিত্তি করেই তার থিওরীটা রচনা করেন যে হিগস ক্ষেত্রটি মুলত একটা বিস্তৃত জালের মতো ক্ষেত্র (আমরা এখানে বুঝবার জন্য ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক ফিল্ডের অনুরুপ ধরতে পারি বিস্তৃতির ক্ষেত্রে) যার মাধ্যমে এটা পার্টিক্যাল সমূহকে প্রভাবিত করতে পারে যারা এর মধ্য দিয়ে চলতে থাকে (এটা আমরা সলিড ফিজিক্সেও খাটাতে পারি)।
আমরা জানি যে যখন একটা ইলেক্ট্রন পজিটিভ চার্জযুক্ত কোনো কৃস্টালের অনুর পাশ দিয়ে যায় তখন ইলেক্ট্রনের ভর ৪০ গুন বেড়ে যায়। এটা এখানকার জন্যও সত্য হতে পারে যখন হিগস ক্ষেত্রে মধ্য দিয়ে কোনো পার্টিক্যাল ভ্রমন করে তখন এটা একটা ডিসটর্শন তৈরী করে যেটা ঐ পার্টিক্যালকে ভর প্রদান করে।
এখন স্ট্যান্ডার্ড মডেলে হিগস ক্ষেত্র দুটি নিরপেক্ষ আর দুটি চার্জযুক্ত ক্ষেত্রের সমন্বয়ে গঠিত।ক্ষেত্রটির উভয় চার্জযুক্ত আর একটি নিরপেক্ষ উপাদানের নাম গোল্ডস্টোন বোসন যেটা অভিলম্ব বরাবর ৩ রকমের মেরু প্রদর্শন করে যাদের নাম গুলো W+, W- এবং Z বোসন। আর বাকী কোয়ান্টাম উপাদানটির নাম ভারী হিগস বোসন। যেহেতু হিগস ক্ষেত্রটি একটা স্কেলার ক্ষেত্র, তাই হিগস বোসনের কোনো স্পিন নাই যার ফলে এর কোনো কৌনিক মোমেন্টাম নাই! হিগস বোসন অবশ্য নিজেই নিজের এন্টি পার্টিক্যাল আর জোড় চার্জ প্যারিটির।
একটু হিসাব:
গজ বোসনের ভরের ইকোয়েশন গুলো:
M(W+ এর) = M(W−) =.৫ *v*g
এবং M(Z বোসনের) =.৫*v(g^2 + g′^2)^.৫
এখান থেকে আমরা M (W+ এবং W- এর জন্য) পাই: ৮০.৪ GeV আর M(Z বোসনের) জন্য পাই ৯১.২ GeV।
আর ভরহীন গজ বোসনের মান ফোটনের সমান মানে ০।
হিগস বোসনের ভরের সূত্র M(h) = √(2*λ*v^2) যেখানে (v ≈ 246 GeV)। আমরা এখনও এর মান জানি না! এলএইচসি এই মান পাবার জন্য দিনরাত খেটে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা!
পরবর্তী পরে আর ডিটেইল আলোচনা করবো এবং পরিশেষে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে যদি হিগস বোসন নাই থেকে থাকে তাহলে ভরের হিসাব কিভাবে মেলানো হবে!
সূত্র:
১) হিগস বোসন উইকি! 
২) সিডিএফ লিংক 
৩) সার্ন 
৪) আর বাকী অন্যান্য পোস্টে লিংক করে দেয়া আছে!