আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০১৪

নক্ষত্রের জীবনকথা - লোহিত দানব, শ্বেত বামন ও নবতারা কি ???

লাল দানব ও লাল অতি দানবঃ
আমাদের সূর্যের সমস্ত হাইড্রোজেন পুড়ে শেষ সময় লাগবে ১০০০ কোটি বছর। ৫০০ কোটি বছর ইতিমধ্যেই অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। এখন থেকে ৫০০ কোটি বছর পর সূর্যের কেন্ত্রমন্ডলের ৯/১ অংশ হিলিয়ামে পরিণত হবে। কেন্ত্রে হিলিয়াম জ্বারাবার মত যথেষ্ট তাপ না থাকায় কেন্ত্রাঞ্চল অভিকর্ষের টানে সংকুচিত হতে শুরু করবে। সংকোচনের ফলে কেন্দ্রের উত্তাপ পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রাঞ্চলের বাইরে হাইড্রোজেন দহন শুরু হবে। 




নিউক্লিয়ার দহনের অঞ্চল এরপর কেন্দ্রাঞ্চল থেকে বাইরের দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকবে। বর্ধিত উত্তাপ বাইরের স্তরে পৌঁছে গেলেই নক্ষত্রটি ফুলতে মুরু করকেব। আরো আরো তাপ বহির্ভাগের কোটি কোটি টন হাইড্রোজেন বহির্ভাগকে আরো সম্প্রসারিত করতে থাকবে। এভাবে ফুলতে ফুলতে নক্ষত্রটি যখন যথেষ্ট বড় হয় তখন এর পৃষ্ঠ তাপমাত্রা 〖2000〗^0 C. এ নেমে অপাসে এবং লাল বর্ণ ধারন করে। এই হল লাল নক্ষত্র। এমাতাবস্থায় নক্ষত্রটির আয়তন এর প্রাথমিক অবস্থার দ্বিগুন হয়ে যায়। পরবর্তী ১০০ কোটি বছরে আয়তন চারগুন হয়ে যায়, এ অবস্থাকে লাল দানব বলা হয়।

এভাবে ফুলতে ফুলতে মাত্র ১০ কোটি বছরের মধ্যে সম্প্রসারিত নক্ষত্রপিটর আয়তন ৫০ গুন বেড়ে গিয়ে ৫০০ দীপ্তিতে কিরণ ছড়াতে থাকে। এই হল লাল অতি দানব নক্ষত্র। যেমন, কালপুরুষ নক্ষত্রমন্ডলীতে বানরাজা, বৃশ্চিকরাশিতে জ্যাষ্ঠা হল লাল অতিদানব তারা।

শ্বেত বামনঃ কোনো নক্ষত্রের ভর সূর্যের চেয়ে কম হলে, ২য় বার লাল দানব পর্যায়ে পৌছানই এর শেষ পরিনতি। কেন্ত্রাঞ্চলের কার্বনকে জ্বারাবার মত যথেষ্ট তাপ আর থাকে না কিন্তু তাপমাত্রা বর্ধিত হওয়ায় সম্প্রসারিত স্তরের পৃষ্ঠদেশের আবরণ এত ঢিলা হয়ে পড়ে যে এর সন্নিকটে সৃষ্ট আলোক বিবিরন চাপ বেড়ে গিয়ে বাইরের আবরন আরো সম্প্রসারিত হয়ে নক্ষত্র থেকে আলাদা হয়ে যায়। অত্যন্ত ব্যাপক আকারের বর্ধিত পাতলা গ্যাসের বলয় মহাশূন্যে অনেক অনেক দূরে ক্রমেই ছড়িয়ে যেতে থাকে। অবশেষে পরিত্যক্ত শক্ত ভারী কেন্ত্রীয় কার্বন শাঁশটি তখন শ্বেত বামন হিসেবে মহাকাশে বিরাজ করে।

নব তারাঃ সাদা বামন তারার ঘনত্ব প্রচন্ডরকম। ভর সূর্যের মত অথচ আয়তন পৃথিবীর মত। উজ্জলতা কম হবার কারণে এদের খালি চোখে দেখা যায় না। শ্বেত বামনের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং সংকুচিত হয়। এক পর্যায়ে আর ছোট হতে পারে না ইলেকট্রনগুলো অধঃপাতিত অবস্থায় পৌঁছে যাবার কারণে। সাধারণত কোনো গ্যাসের চাপ তাপমাত্রার উপর নির্ভর করলেও আয়োনাইজেড অবস্থায় তা হয় না। আয়োনাইজড গ্যাস হল, মুক্ত ইলেকট্রনের সাথে নিউক্লিয়াসের মিশ্রন। নক্ষত্রের অভ্যন্তরে গ্যাস সম্পূর্ন আয়োনাইজড হবার ফলে উচ্চ ঘনত্ব ও গ্যাসের চাপ সুষ্টি হয় ইলেকট্রনগুলোর কারনে।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দু’টি নিয়ম তখন খুবই গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠে। ১থমত, গতিশীল ইলেকট্রনগুলো নক্ষত্রের কেন্দ্রে থাকলেও তাদের পূর্ন করে নির্দিষ্ট কিছু কক্ষপথ। ২য়ত, কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান সংক্রান্ত সূত্রটি হল পলির বর্জন নীতি। এ নীতি অনুসারে দু’টি অভিন্ন ইলেকট্রন একই শক্তিস্তরে অবস্থান করতে পারে না। নিম্ন ঘনত্বের গ্যাসের প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে কয়েকটি ইলেকট্রন থাকে সুতরাং প্রচুর খালি শক্তিস্তর থাকবে। কিন্তু গ্যাসের ঘনত্ব খুব বেশী হলে যেভাবেই হোক নিম্নশক্তিস্তরের সবগুলো পূর্ন থাকবে। এই ধরনের পদার্থে ধীর গতিতে থাকতে পারে না। কারণ, তার জন্য কোনো শক্তিস্তর খালি নেই ফলে, যথেষ্ট পরিমান শক্তিশোষন করে, তাকে গতিশীল হতে হয় এবং উচ্চশক্তিস্তরে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ ধরনের অবস্থাকে অধঃপাতিত অবস্থা বলে। এমাতাবস্থায় তাপযুক্ত করলে আয়োনাইজড গ্যাসে বেশীরভাগই নিউক্লিয়াসের দ্রুতি বৃদ্ধিতে মহায়তা করে এবং শুধুমাত্র অল্প কয়েকটি ইলেকট্রন যথেষ্ট পরিমান শক্তি শোষণ করে উচ্চ শক্তিস্তরে পৌঁছাতে। এভাবে গ্যাসের পরিবর্তনশীল তাপমাত্রা কোনো প্রভাব ফেলে না চাপের পরিবর্তনের ব্যাপারে। চাপ নির্ভর করে ইলেকট্রনের দ্রুতির উপর, যা প্রচন্ড শক্তি ছাড়া পরিবর্তিত হতে পারে না। এর ফলে মৃত্যুমুখী নক্ষত্রের অধঃপাতিত গ্যাসের এই বর্হিমুখী চাপ সংকোচনকে প্রতিরোধ করে। একে অধঃপাতিত ইলেকট্রনের চাপ বলে। এ কারণে, তারা পরস্পর থেকে দূরে চলে যেতে থাকে ফলে নক্ষত্রগুলোতে প্রসারনের চেষ্টা দেখা দেয়। তাপ ও চাপের স্বতন্ত্রতার কারণে হিলিয়াম ফ্ল্যাশ ঘটে। 

সংকুচিত হতে হতে অদৃশ্য হবার উপক্রম হলেই এই প্রচন্ড বিস্কোরন ঘটে। কোনো নতুন (নব) তারার জন্ম হয়েছে বলে ভ্রম হয়। একে নব তারা (Nova) বলে। দ্বৈত বা যুগল নক্ষত্রের সঙ্গী বৃহদাকার নক্ষত্রটি থেকে বস্তুকনার প্রবাহ সাদা বামনে পরিনত হয়ে এ অল্ডপস্থায়ী জ্বালানীর যোগান দেয়।বর্তমানে বিখাত নোভাগুলো হল Nova Dq Herculis 1934, Nova pupis 1942. 

ভারতীয় বংমোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী সুব্রাক্ষনিয়াম চন্ত্রশেখর প্রমান করেন যে, সূর্যের চেয়ে ১.৪ গুন কম ভরের কোনো নক্ষত্র চিবস্কেরিত হয় না। সাদা বামন পর্যন্তই এর অন্তিম পরিনতি। ভরের এ সীমাকে চন্ত্রশেখর সীমা বলে।