২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা, তখনকার সময়ে নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকার সাপ্তাহিক বিজ্ঞান পাতার মাঝে খোঁজাখুঁজি করে বেড়াতাম। সেই সময়ে এমন একটা খবর বেরোল যেটিতে সারা দুনিয়া হুলস্থূল পড়ে গেল। খবরটি ছিল এরকম "নিউট্রিনো ছোটে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে". যারা বিজ্ঞান নিয়ে নানা রকম খোঁজখবর রাখে, তাদের জন্য তো অবাক করা কাণ্ডই সাথে সাথে যারা বিজ্ঞানের ছাত্র নয়, তাদেরও যেন অবাক করা অবস্থা। কি হলো কিনা? কি দেখা যায় কিনা? এসব শুনছি? সত্যি বলছে তো? কারণ এই তথ্য সঠিক হয়ে থাকলে বিজ্ঞানের অনেক সূত্রই লিখতে হবে নতুন করে। উচ্চ শ্রেণির আইনস্টাইনীয় বিজ্ঞানের অনেক কিছুর সাথেই এই তথ্য বিরোধ অবস্থানে যায়। তার মানে আইনস্টাইন ভুল।
আইনস্টাইনের সূত্রানুসারে আলোর চেয়ে বেশি বেগ অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো বস্তুই আলোর বেগের অধিক বেগে ছোটতে পারে না। কিন্তু এত নির্ভরযোগ্য স্বয়ং সার্নের বিজ্ঞানীরা দাবী করছে এই কথা, তাই ফেলেও দেয়া যায় না। মনে হয় সম্ভবত সারা দুনিয়ার সকল পত্রিকাই এক খবরটা ফলাও করে ছাপিয়েছে। ছাপাবে না কেন পুরো বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়েই টান দেয় যেন! পরে অবশ্য আরও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে এটা আসলে ভুল ছিল, পরীক্ষার ফলাফলে সামান্য ত্রুটি ছিল। এজন্য অপেরার (সার্নের নিউট্রিনো গবেষণা নিয়ে একটি প্রজেক্ট) প্রধানকে অপসারণও করা হয়। এই হুলস্থূল পাকানো জিনিসটি একটি কণা, নিউট্রিনো। আসলেই সে একটি ভুতুড়ে কণা। নিউট্রিনো তাঁর আবিষ্কারের জন্মলগ্ন থেকেই ভুতুড়ে আচরণ করে যাচ্ছে। এই নিউট্রিনোর সাথে সাথে এত সব কণা আবিষ্কার হয়েছে তাদের নাড়ি-নক্ষত্র সব জানা হয়েছে কিন্তু এই হতচ্ছাড়া নিউট্রিনো সম্বন্ধে তেমন ভালো কিছু জানা যায় নি এখনো। এ নিয়ে পদার্থবিদদের মাঝে যেন একটা স্থায়ী অসন্তোষ।
শুরুর কথা
অগ্রসরমান বিজ্ঞানে আজ আমরা জানি প্রোটন ও নিউট্রন কোনো মৌলিক কণা নয়। এ দুটোই গঠিত কোয়ার্ক দিয়ে। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত ছিল যে পরমাণু বা মহাবিশ্বের সকল কিছু শুধু ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে গঠিত। তিরিশের দশকের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নিউট্রন নিয়ে গবেষণা করতে করতে এক সময় একটি অজানা কণার ধারণা পান। তারা আঁচ করতে পারেন এই তিনটি কণা ছাড়াও একটি কণা থাকতে পারে। যদি কল্পনায় একটি কণাকে ধরে নেয়া না হয় তাহলে দেখা যায় ভোরের ও শক্তির নিত্যতা সূত্র ভুল হয়ে যায়। পরমাণু থেকে নিউট্রনকে অবমুক্ত করে রাখলে দেখা যায় নিউট্রনটি আর নিউট্রন থাকছে না। সেটি নিজেকে পাল্টে নিচ্ছে ইলেকট্রন ও প্রোটনে। এই পাল্টানোর সাথে সাথে তাঁর ভরেরও পরিবর্তন হয়। আদি অবস্থায় যে ভর ছিল তা থাকে না, কমে যায়। যদি কমেই যায় তবে সে গেল কই? ভর ও শক্তির নিত্যতা সূত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে বাধ্য হয়েই ধরে নিতে হলো একটি অজানা কণার অস্তিত্ব। তখনকার পর্যন্ত বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে হয়তো তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। পরের বছর আরেক দিকপাল এনরিকো ফারমি এই অজানা কণাটির নাম দেন নিউট্রিনো। এই গড়বড়ে অবস্থা দিয়েই নিউট্রিনোর শুরু।
আজব আজিব!
নিউট্রিনোর সবচেয়ে রহস্যময় জিনিসটা মনে হয় তার গতি। শুধু গতি বললেই শেষ হবে না বলতে হবে দুর্দমনীয় গতি। এটি আলোর বেগে ছুটে চলে। সাধারণ কোনো আলোর কণা যখন ছুটে চলে তখন পথিমধ্যে কোনো অস্বচ্ছ বাধা/প্রতিবন্ধকতা পড়লে আর আলো আর তা ভেদ করে যেতে পারে না। সেখানেই ঘটে তার যাত্রার সমাপ্তি। বড়জোর প্রতিফলিত হয়। কিন্তু নিউট্রিনো এমন এক আজিব জিনিস যেটার সামনে হাজার প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা ভেদ করে অনায়াসে চলে যেতে পারে। পৃথিবীর মাটির ভেতর দিয়ে এক প্রান্ত থেকে কোনো নিউট্রিনোকে অপর প্রান্তে ছুড়ে মারলে তা এক সেকেন্ডের লক্ষ ভাগের এক ভাগেই অতিক্রম করে যাবে। পৃথিবী যে এত্ত বড় বাধা, প্রতিবন্ধকতা তাকে যেন বুড়ো আঙ্গুলই দেখিয়ে দেয়! শীতের কুয়াশার ভিতর দিয়ে একটু বুলেট যেমন অনায়াসেই তা পার হয়ে বনবন করে ছুটে যেতে পারে নিউট্রিনোও যেন তেমনই ভাবে পুরো পৃথিবীকে ভেদ করে যেতে পারে। আর সে নিউট্রিনো প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে এরকম অতিক্রম করে যাচ্ছেই, বিরামহীনভাবে। আমরা যে পৃথিবীর মাটিতে হাঁটছি সে হাটার সময় আমাদের পায়ের পাতা দিয়ে কি বিশাল পরিমাণ নিউট্রিনো যে ছুটে যাচ্ছে তাঁর আনুমানিক সংখ্যাটা শুনলে বিশ্বাস হতে চায় না। পায়ের পাতা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন পরিমাণ নিউট্রিনো ছুটে যাচ্ছে। আমরা বুঝতেও পারছি না, অথচ আমাদের এফোঁড় ওফোঁড় করে চলেছেই। এমন কি এই মুহূর্তে আমাদের হাতে ধরা কোনো বই কিংবা ম্যাগাজিনের মধ্যে দিয়েও ছুটে যাচ্ছে। ছুটে যাচ্ছে আলোর বেগে।
এই বেগ নিয়েও একটা ধাঁধায় পড়তে হয় বিজ্ঞানীদের। যদি নিউট্রিনোর ভর থাকে তবে সে আলোর বেগে ছুটে কি করে? ভর থাকলে তো আলোর বেগে ছুটা সম্ভব নয়। কোনো কণার ভর যদি শূন্য হয় তবে তাকে অবশ্যই আলোর বেগে ছুটতে হবে, এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। ঠিক এই কথাটাকেই উল্টে বলা যায় কোনো কিছু যদি আলোর বেগে ছুটতে চায় তবে তাকে অবশ্যই ভরশূন্য হতে হবে। রাজনীতিবিদরা যেমন মাঝে মাঝে নাকানি চুবানি খায় বিজ্ঞানীদেরও তেমন নাকানি চুবানি খেতে হল এই নিউট্রিনোর বদৌলতে। পরে অবশ্য এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। কয়েক প্রকারের নিউট্রিনো আবিষ্কার হয়েছে। কারো ওজন আছে কারো নেই।
সম্ভাবনা
যোগাযোগ ব্যবস্থায় পৃথিবীকে ছোট করে ফেলাই যেন পৃথিবীর অন্যতম এজেন্ডা। সেকেন্ডের ভেতরেই তথ্য আদান প্রদান করা চাই। যেহেতু নিউট্রিনো এমন বাঁধাহীনভাবে চলে তাই এই নিউট্রিনোর মাঝে তথ্য দিয়ে প্রেরণ করা যেতে পারে না? ধরা যাক পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে কোনো মেসেজ অপর প্রান্তে পাঠানো লাগবে, তাঁর জন্য যেটা করতে হবে সেটা হল স্যাটেলাইটের সাহায্য নেয়া, কিংবা তারের / সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্য নেয়া। মোটামুটি বেশি সময় না লাগলেও ভালোই সময় লাগে তাতে। এখানে যদি নিউট্রিনো দিয়ে কাজটা করা যায় তবে কতই না সহজ হয়ে যায়। নিউট্রিনো মাটি ভেদ করে ফেলে যেতে পারবে সেকেন্ডের লক্ষ ভাগের এক ভাগে। লাগবে না কোনো তার। উপযোগী একটা ট্রান্সমিটার আর রিসিভার হলেই হলো। আমরা যে টেলিফোন, মোবাইল ব্যবহার করি সেখানেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই নিউট্রিনো প্রযুক্তি।
কিন্তু ওই যে বিজ্ঞানীদের নাকানি চুবানি খাওয়ানো কণা সে কি আর সহজে ধরা দিবে? এখানেও আছে ঝামেলা। নিউট্রিনো সে অনায়াসেই ভেদ করে যাবে রিসিভার। রিসিভারকে সাড়াই দিবে না। সামান্য একটা কণাকে ধরতে নিচের চিত্রের মত এত বিশাল সাইজের ভৌতিক ডিটেক্টর তৈরি করতে হয়।
চিত্র: নিউট্রিনোকে দেখার জন্য তৈরি করা বিশাল ডিটেক্টর।
কোথা থেকে আসে এরা?
নিউট্রিনোর সবচেয়ে বড় আধার বলা যায় সকল নক্ষত্রকে। তার মাঝে আমাদের সূর্যও তো একটা নক্ষত্র। এই সূর্যেও প্রতিনিয়ত অসংখ্য নিউট্রিনো তৈরি হচ্ছে। আমরা জানি সূর্যে প্রতিনিয়ত আগুন জ্বলছে আর সে আগুনে কোনো প্রকার অক্সিজেন লাগে না। যেটা হয় সেখানে তা হলো নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় অসংখ্য নিউট্রন মুক্ত হচ্ছে, আর নিউট্রন থেকেই তৈরি হয় নিউট্রিনো। প্রতিনিয়ত সেই নিউট্রিনো ছুটে আসছে আমাদের দিকেও। একেকটা সুপারনোভা বিস্ফোরণে কি পরিমাণ নিউট্রিনো অবমুক্ত হয় তার সংখ্যা কল্পনা করে নেয়াও সাধ্যের অতীত। কথায় বললে মোটামুটি এরকম দাড়ায় একশ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন... আমাদের পৃথিবীর মাঝে যে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটানো হয় তাতেও তৈরি হয় অনেক নিউট্রিনো। নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রেও তাই। তাছাড়াও কণা ত্বরকে সংঘর্ষের মাধ্যমেও তৈরি হয় নিউট্রিনো। প্রত্যেকটা নক্ষত্রের মৃত্যুতে হয় নিউট্রিনো। সুপারনোভার বিস্ফোরণে হয় নিউট্রিনো। সেই মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকেই নানান মহাজাগতিক ঘটনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এই মহাবিশ্ব। সেই আদি মহাবিশ্বের (Baby universe) সাক্ষীরূপে পাওয়া যায় এই নিউট্রিনোকে। কত কাল কত বছর ধরে তারা ছুটেই চলছে এবং চলতে চলতে একসময় কোনো কোনোটি আমাদের পৃথিবীর মাঝে দিয়েও যাচ্ছে। যেটা পটভূমি বিকিরণ (Background Radiation) নামে পরিচিত। এর চেয়ে অবাক করা জিনিস আর কিই বা হতে পারে যে আমরা এমন একটা জিনিসের সংস্পর্শে আসতে পারছি যা কিনা সৃষ্টির শুরুর প্রতিনিধিত্ব করে।
নিউট্রিনো কী?
আমরা আগেই দেখেছি প্রোটন ও নিউট্রন কোনো মৌলিক কণা নয়। যে তিনটি কণা ইলেকট্রন, প্রোটন, ও নিউট্রন নিয়ে মহাবিশ্বের সকল কিছু গঠিত বলে ধরা হতো তার মাঝে ইলেকট্রনই শুধু আজ পর্যন্ত মৌলিক কণা হিসেবে টিকে আছে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ মডেল বা স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে মহাবিশ্ব গঠিত হয়েছে তিনটি কণা দিয়েই।
সেগুলো হচ্ছে
১. কোয়ার্ক
২. বোসন
৩. লেপটন
এর মাঝে তিন নম্বর প্রকারভেদ লেপটন আবার দুই প্রকার। এক প্রকার ইলেকট্রন আরেক প্রকার নিউট্রিনো। নিউট্রিনোর কোনো চার্জ নেই। যেহেতু কোনো চার্জ নেই তাই সে কোনো প্রকার চুম্বক ক্ষেত্র, দ্বারাও প্রভাবিত হয় না। আর সেজন্য এই নিউট্রিনো নিয়ে গবেষণা করতে বিজ্ঞানীদের নানান হ্যাপা পোহাতে হয়। চার্জহীন বলেই তার এরকম নাম। নিউট্রিনো নামটার সরল বাংলা তর্জমা করলে এরকম দাঁড়ায় চার্জহীন অতি ক্ষুদ্র কণা। এই কণাটিকে প্রকাশ করা হয় গ্রীক বর্ণ ν (নিউ) দিয়ে। এই কণা কারো সাথে বিক্রিয়াও করে না। এই মুহূর্তে এই বকবকানি যার দ্বারা পড়া হচ্ছে তার শরীরের ভেতর দিয়েও সেকেন্ডে হাজার কোটি নিউট্রিনো পার হয়ে যাচ্ছে। কই? কেউ কি টের পাচ্ছে? নিউট্রিনো তিন প্রকার। হিসাবের মাঝে তিন প্রকার নিউট্রিনোর দরকার পড়ে তিন প্রকার ইলেকট্রনের জন্য। যেমন করে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ আছে তিনটি তেমনি ইলেকট্রনর প্রকার আছে তিনটি।
১. ইলেকট্রন-ইলেকট্রন। যাকে বলে "ইলেকট্রন" (সত্যিকারের ইলেকট্রন)
২. মিউ-ইলেকট্রন। যাকে বলে "মিউওন"
৩. টাউ-ইলেকট্রন।যাকে বলে "টাউওন"
এই প্রতিটি কণার সাথে আছে একটি করে নিউট্রিনো।
ইলেকট্রন নিউট্রিনো
মিউ নিউট্রিনো
টাউ নিউট্রিনো
এক পলকে নিউট্রিনোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
১৯৩১- বিজ্ঞানী উলফগ্যাং পাউলি নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করেন ও ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ইলেকট্রনের ভর, শক্তি, ভরবেগ ইত্যাদি মিলাতে গিয়ে তিনি এটি লক্ষ করেন।
১৯৩২- এনরিকো ফারমি এর নাম দেন নিউট্রিনো।
১৯৩৪- এনরিকো ফারমি নিউট্রিনোকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি তত্ত্ব দাড় করান।
১৯৫৬- পরীক্ষার মাধ্যমে সর্ব প্রথম নিউট্রিনো আবিষ্কার করা হয়।
১৯৬২- নিউট্রিনোর অন্য একটি জাত 'মিউওন নিউট্রিনো' আবিষ্কার।
১৯৬৮- সূর্য থেকে আগত নিউট্রিনো খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা প্রথম কোনো পরীক্ষা চালায়।
১৯৭৮- স্ট্যানফোর্ড লিনিয়ার এসিলারেটরে টাউ লেপটন আবিষ্কৃত হয়। তাতে টাউ নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করা হয়। এবং তাতে সে কণার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।
১৯৮৫- নিউট্রিনোর ভর শূন্য নয় এমন ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় ছিল আই.বি.এম. ও রাশিয়ান টিম।
১৯৮৭- ক্যামিওক্যান্ড ও রাশিয়ান টিম সুপারনোভা থেকে আগত নিউট্রিনো শনাক্ত করে।
১৯৮৮- ৬২ সালের আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীদের নোবেল পুরস্কার প্রদান।
১৯৮৯- ক্যামিওক্যান্ড আরেকটি গবেষণায় সূর্য থেকে আগত নিউট্রিনো পরিমাপ করে এবং দেখতে পায় সূর্য থেকে যে পরিমাণ নিউট্রিনো ছুটে আসার কথা সে পরিমাণ আসে না। কম আসে। তিন ভাগের এক ভাগ।
১৯৯০- আই.বি.এম. সূর্যের আগত তিন ভাগের এক ভাগ নিউট্রিনো বিষয়ক সমস্যার সঠিক কারণ খুঁজে পায়।
১৯৯৮- এই সময়ে বিজ্ঞানীরা একেবারে নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা করলেন যে নিউট্রিনোর ভর আছে।
২০০০- ভবিষ্যদ্বাণী করা টাউ নিওট্রিনোকে খুঁজে পাওয়া যায়।
২০০২- সূর্যের নিউট্রিনো সমস্যার সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীদের নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়।
তথ্যসুত্র:
1. Ghost of the Universe; Frank Close
2. Neutrino Experiments Light the Way to New Physics; Martin Hirsch
3. অপ্রকাশলোকের সন্ধানে; ড. এ. এম. হারুন-অর-রশিদ
4. বিজ্ঞান প্রজন্ম; প্রথম আলো
5. নিউট্রিনো ছোটে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে? ; তানভীর আহমেদ ভুঁইয়া
6. Wikipedia : Neutrino
7. আরও একটুখানি বিজ্ঞান: মু.জা.ই.
8. আগামী প্রজন্মের বিজ্ঞান: ভবেশ রায়
9. Neutrinos not faster than light : Nature Magazine
আইনস্টাইনের সূত্রানুসারে আলোর চেয়ে বেশি বেগ অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো বস্তুই আলোর বেগের অধিক বেগে ছোটতে পারে না। কিন্তু এত নির্ভরযোগ্য স্বয়ং সার্নের বিজ্ঞানীরা দাবী করছে এই কথা, তাই ফেলেও দেয়া যায় না। মনে হয় সম্ভবত সারা দুনিয়ার সকল পত্রিকাই এক খবরটা ফলাও করে ছাপিয়েছে। ছাপাবে না কেন পুরো বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়েই টান দেয় যেন! পরে অবশ্য আরও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে এটা আসলে ভুল ছিল, পরীক্ষার ফলাফলে সামান্য ত্রুটি ছিল। এজন্য অপেরার (সার্নের নিউট্রিনো গবেষণা নিয়ে একটি প্রজেক্ট) প্রধানকে অপসারণও করা হয়। এই হুলস্থূল পাকানো জিনিসটি একটি কণা, নিউট্রিনো। আসলেই সে একটি ভুতুড়ে কণা। নিউট্রিনো তাঁর আবিষ্কারের জন্মলগ্ন থেকেই ভুতুড়ে আচরণ করে যাচ্ছে। এই নিউট্রিনোর সাথে সাথে এত সব কণা আবিষ্কার হয়েছে তাদের নাড়ি-নক্ষত্র সব জানা হয়েছে কিন্তু এই হতচ্ছাড়া নিউট্রিনো সম্বন্ধে তেমন ভালো কিছু জানা যায় নি এখনো। এ নিয়ে পদার্থবিদদের মাঝে যেন একটা স্থায়ী অসন্তোষ।
শুরুর কথা
অগ্রসরমান বিজ্ঞানে আজ আমরা জানি প্রোটন ও নিউট্রন কোনো মৌলিক কণা নয়। এ দুটোই গঠিত কোয়ার্ক দিয়ে। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত ছিল যে পরমাণু বা মহাবিশ্বের সকল কিছু শুধু ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে গঠিত। তিরিশের দশকের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নিউট্রন নিয়ে গবেষণা করতে করতে এক সময় একটি অজানা কণার ধারণা পান। তারা আঁচ করতে পারেন এই তিনটি কণা ছাড়াও একটি কণা থাকতে পারে। যদি কল্পনায় একটি কণাকে ধরে নেয়া না হয় তাহলে দেখা যায় ভোরের ও শক্তির নিত্যতা সূত্র ভুল হয়ে যায়। পরমাণু থেকে নিউট্রনকে অবমুক্ত করে রাখলে দেখা যায় নিউট্রনটি আর নিউট্রন থাকছে না। সেটি নিজেকে পাল্টে নিচ্ছে ইলেকট্রন ও প্রোটনে। এই পাল্টানোর সাথে সাথে তাঁর ভরেরও পরিবর্তন হয়। আদি অবস্থায় যে ভর ছিল তা থাকে না, কমে যায়। যদি কমেই যায় তবে সে গেল কই? ভর ও শক্তির নিত্যতা সূত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে বাধ্য হয়েই ধরে নিতে হলো একটি অজানা কণার অস্তিত্ব। তখনকার পর্যন্ত বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে হয়তো তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। পরের বছর আরেক দিকপাল এনরিকো ফারমি এই অজানা কণাটির নাম দেন নিউট্রিনো। এই গড়বড়ে অবস্থা দিয়েই নিউট্রিনোর শুরু।
আজব আজিব!
নিউট্রিনোর সবচেয়ে রহস্যময় জিনিসটা মনে হয় তার গতি। শুধু গতি বললেই শেষ হবে না বলতে হবে দুর্দমনীয় গতি। এটি আলোর বেগে ছুটে চলে। সাধারণ কোনো আলোর কণা যখন ছুটে চলে তখন পথিমধ্যে কোনো অস্বচ্ছ বাধা/প্রতিবন্ধকতা পড়লে আর আলো আর তা ভেদ করে যেতে পারে না। সেখানেই ঘটে তার যাত্রার সমাপ্তি। বড়জোর প্রতিফলিত হয়। কিন্তু নিউট্রিনো এমন এক আজিব জিনিস যেটার সামনে হাজার প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা ভেদ করে অনায়াসে চলে যেতে পারে। পৃথিবীর মাটির ভেতর দিয়ে এক প্রান্ত থেকে কোনো নিউট্রিনোকে অপর প্রান্তে ছুড়ে মারলে তা এক সেকেন্ডের লক্ষ ভাগের এক ভাগেই অতিক্রম করে যাবে। পৃথিবী যে এত্ত বড় বাধা, প্রতিবন্ধকতা তাকে যেন বুড়ো আঙ্গুলই দেখিয়ে দেয়! শীতের কুয়াশার ভিতর দিয়ে একটু বুলেট যেমন অনায়াসেই তা পার হয়ে বনবন করে ছুটে যেতে পারে নিউট্রিনোও যেন তেমনই ভাবে পুরো পৃথিবীকে ভেদ করে যেতে পারে। আর সে নিউট্রিনো প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে এরকম অতিক্রম করে যাচ্ছেই, বিরামহীনভাবে। আমরা যে পৃথিবীর মাটিতে হাঁটছি সে হাটার সময় আমাদের পায়ের পাতা দিয়ে কি বিশাল পরিমাণ নিউট্রিনো যে ছুটে যাচ্ছে তাঁর আনুমানিক সংখ্যাটা শুনলে বিশ্বাস হতে চায় না। পায়ের পাতা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন পরিমাণ নিউট্রিনো ছুটে যাচ্ছে। আমরা বুঝতেও পারছি না, অথচ আমাদের এফোঁড় ওফোঁড় করে চলেছেই। এমন কি এই মুহূর্তে আমাদের হাতে ধরা কোনো বই কিংবা ম্যাগাজিনের মধ্যে দিয়েও ছুটে যাচ্ছে। ছুটে যাচ্ছে আলোর বেগে।
এই বেগ নিয়েও একটা ধাঁধায় পড়তে হয় বিজ্ঞানীদের। যদি নিউট্রিনোর ভর থাকে তবে সে আলোর বেগে ছুটে কি করে? ভর থাকলে তো আলোর বেগে ছুটা সম্ভব নয়। কোনো কণার ভর যদি শূন্য হয় তবে তাকে অবশ্যই আলোর বেগে ছুটতে হবে, এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। ঠিক এই কথাটাকেই উল্টে বলা যায় কোনো কিছু যদি আলোর বেগে ছুটতে চায় তবে তাকে অবশ্যই ভরশূন্য হতে হবে। রাজনীতিবিদরা যেমন মাঝে মাঝে নাকানি চুবানি খায় বিজ্ঞানীদেরও তেমন নাকানি চুবানি খেতে হল এই নিউট্রিনোর বদৌলতে। পরে অবশ্য এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। কয়েক প্রকারের নিউট্রিনো আবিষ্কার হয়েছে। কারো ওজন আছে কারো নেই।
সম্ভাবনা
যোগাযোগ ব্যবস্থায় পৃথিবীকে ছোট করে ফেলাই যেন পৃথিবীর অন্যতম এজেন্ডা। সেকেন্ডের ভেতরেই তথ্য আদান প্রদান করা চাই। যেহেতু নিউট্রিনো এমন বাঁধাহীনভাবে চলে তাই এই নিউট্রিনোর মাঝে তথ্য দিয়ে প্রেরণ করা যেতে পারে না? ধরা যাক পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে কোনো মেসেজ অপর প্রান্তে পাঠানো লাগবে, তাঁর জন্য যেটা করতে হবে সেটা হল স্যাটেলাইটের সাহায্য নেয়া, কিংবা তারের / সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্য নেয়া। মোটামুটি বেশি সময় না লাগলেও ভালোই সময় লাগে তাতে। এখানে যদি নিউট্রিনো দিয়ে কাজটা করা যায় তবে কতই না সহজ হয়ে যায়। নিউট্রিনো মাটি ভেদ করে ফেলে যেতে পারবে সেকেন্ডের লক্ষ ভাগের এক ভাগে। লাগবে না কোনো তার। উপযোগী একটা ট্রান্সমিটার আর রিসিভার হলেই হলো। আমরা যে টেলিফোন, মোবাইল ব্যবহার করি সেখানেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই নিউট্রিনো প্রযুক্তি।
কিন্তু ওই যে বিজ্ঞানীদের নাকানি চুবানি খাওয়ানো কণা সে কি আর সহজে ধরা দিবে? এখানেও আছে ঝামেলা। নিউট্রিনো সে অনায়াসেই ভেদ করে যাবে রিসিভার। রিসিভারকে সাড়াই দিবে না। সামান্য একটা কণাকে ধরতে নিচের চিত্রের মত এত বিশাল সাইজের ভৌতিক ডিটেক্টর তৈরি করতে হয়।
চিত্র: নিউট্রিনোকে দেখার জন্য তৈরি করা বিশাল ডিটেক্টর।
কোথা থেকে আসে এরা?
নিউট্রিনোর সবচেয়ে বড় আধার বলা যায় সকল নক্ষত্রকে। তার মাঝে আমাদের সূর্যও তো একটা নক্ষত্র। এই সূর্যেও প্রতিনিয়ত অসংখ্য নিউট্রিনো তৈরি হচ্ছে। আমরা জানি সূর্যে প্রতিনিয়ত আগুন জ্বলছে আর সে আগুনে কোনো প্রকার অক্সিজেন লাগে না। যেটা হয় সেখানে তা হলো নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় অসংখ্য নিউট্রন মুক্ত হচ্ছে, আর নিউট্রন থেকেই তৈরি হয় নিউট্রিনো। প্রতিনিয়ত সেই নিউট্রিনো ছুটে আসছে আমাদের দিকেও। একেকটা সুপারনোভা বিস্ফোরণে কি পরিমাণ নিউট্রিনো অবমুক্ত হয় তার সংখ্যা কল্পনা করে নেয়াও সাধ্যের অতীত। কথায় বললে মোটামুটি এরকম দাড়ায় একশ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন... আমাদের পৃথিবীর মাঝে যে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটানো হয় তাতেও তৈরি হয় অনেক নিউট্রিনো। নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রেও তাই। তাছাড়াও কণা ত্বরকে সংঘর্ষের মাধ্যমেও তৈরি হয় নিউট্রিনো। প্রত্যেকটা নক্ষত্রের মৃত্যুতে হয় নিউট্রিনো। সুপারনোভার বিস্ফোরণে হয় নিউট্রিনো। সেই মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকেই নানান মহাজাগতিক ঘটনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এই মহাবিশ্ব। সেই আদি মহাবিশ্বের (Baby universe) সাক্ষীরূপে পাওয়া যায় এই নিউট্রিনোকে। কত কাল কত বছর ধরে তারা ছুটেই চলছে এবং চলতে চলতে একসময় কোনো কোনোটি আমাদের পৃথিবীর মাঝে দিয়েও যাচ্ছে। যেটা পটভূমি বিকিরণ (Background Radiation) নামে পরিচিত। এর চেয়ে অবাক করা জিনিস আর কিই বা হতে পারে যে আমরা এমন একটা জিনিসের সংস্পর্শে আসতে পারছি যা কিনা সৃষ্টির শুরুর প্রতিনিধিত্ব করে।
নিউট্রিনো কী?
আমরা আগেই দেখেছি প্রোটন ও নিউট্রন কোনো মৌলিক কণা নয়। যে তিনটি কণা ইলেকট্রন, প্রোটন, ও নিউট্রন নিয়ে মহাবিশ্বের সকল কিছু গঠিত বলে ধরা হতো তার মাঝে ইলেকট্রনই শুধু আজ পর্যন্ত মৌলিক কণা হিসেবে টিকে আছে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ মডেল বা স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে মহাবিশ্ব গঠিত হয়েছে তিনটি কণা দিয়েই।
সেগুলো হচ্ছে
১. কোয়ার্ক
২. বোসন
৩. লেপটন
এর মাঝে তিন নম্বর প্রকারভেদ লেপটন আবার দুই প্রকার। এক প্রকার ইলেকট্রন আরেক প্রকার নিউট্রিনো। নিউট্রিনোর কোনো চার্জ নেই। যেহেতু কোনো চার্জ নেই তাই সে কোনো প্রকার চুম্বক ক্ষেত্র, দ্বারাও প্রভাবিত হয় না। আর সেজন্য এই নিউট্রিনো নিয়ে গবেষণা করতে বিজ্ঞানীদের নানান হ্যাপা পোহাতে হয়। চার্জহীন বলেই তার এরকম নাম। নিউট্রিনো নামটার সরল বাংলা তর্জমা করলে এরকম দাঁড়ায় চার্জহীন অতি ক্ষুদ্র কণা। এই কণাটিকে প্রকাশ করা হয় গ্রীক বর্ণ ν (নিউ) দিয়ে। এই কণা কারো সাথে বিক্রিয়াও করে না। এই মুহূর্তে এই বকবকানি যার দ্বারা পড়া হচ্ছে তার শরীরের ভেতর দিয়েও সেকেন্ডে হাজার কোটি নিউট্রিনো পার হয়ে যাচ্ছে। কই? কেউ কি টের পাচ্ছে? নিউট্রিনো তিন প্রকার। হিসাবের মাঝে তিন প্রকার নিউট্রিনোর দরকার পড়ে তিন প্রকার ইলেকট্রনের জন্য। যেমন করে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ আছে তিনটি তেমনি ইলেকট্রনর প্রকার আছে তিনটি।
১. ইলেকট্রন-ইলেকট্রন। যাকে বলে "ইলেকট্রন" (সত্যিকারের ইলেকট্রন)
২. মিউ-ইলেকট্রন। যাকে বলে "মিউওন"
৩. টাউ-ইলেকট্রন।যাকে বলে "টাউওন"
এই প্রতিটি কণার সাথে আছে একটি করে নিউট্রিনো।
ইলেকট্রন নিউট্রিনো
মিউ নিউট্রিনো
টাউ নিউট্রিনো
এক পলকে নিউট্রিনোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
১৯৩১- বিজ্ঞানী উলফগ্যাং পাউলি নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করেন ও ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ইলেকট্রনের ভর, শক্তি, ভরবেগ ইত্যাদি মিলাতে গিয়ে তিনি এটি লক্ষ করেন।
১৯৩২- এনরিকো ফারমি এর নাম দেন নিউট্রিনো।
১৯৩৪- এনরিকো ফারমি নিউট্রিনোকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি তত্ত্ব দাড় করান।
১৯৫৬- পরীক্ষার মাধ্যমে সর্ব প্রথম নিউট্রিনো আবিষ্কার করা হয়।
১৯৬২- নিউট্রিনোর অন্য একটি জাত 'মিউওন নিউট্রিনো' আবিষ্কার।
১৯৬৮- সূর্য থেকে আগত নিউট্রিনো খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা প্রথম কোনো পরীক্ষা চালায়।
১৯৭৮- স্ট্যানফোর্ড লিনিয়ার এসিলারেটরে টাউ লেপটন আবিষ্কৃত হয়। তাতে টাউ নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করা হয়। এবং তাতে সে কণার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।
১৯৮৫- নিউট্রিনোর ভর শূন্য নয় এমন ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় ছিল আই.বি.এম. ও রাশিয়ান টিম।
১৯৮৭- ক্যামিওক্যান্ড ও রাশিয়ান টিম সুপারনোভা থেকে আগত নিউট্রিনো শনাক্ত করে।
১৯৮৮- ৬২ সালের আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীদের নোবেল পুরস্কার প্রদান।
১৯৮৯- ক্যামিওক্যান্ড আরেকটি গবেষণায় সূর্য থেকে আগত নিউট্রিনো পরিমাপ করে এবং দেখতে পায় সূর্য থেকে যে পরিমাণ নিউট্রিনো ছুটে আসার কথা সে পরিমাণ আসে না। কম আসে। তিন ভাগের এক ভাগ।
১৯৯০- আই.বি.এম. সূর্যের আগত তিন ভাগের এক ভাগ নিউট্রিনো বিষয়ক সমস্যার সঠিক কারণ খুঁজে পায়।
১৯৯৮- এই সময়ে বিজ্ঞানীরা একেবারে নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা করলেন যে নিউট্রিনোর ভর আছে।
২০০০- ভবিষ্যদ্বাণী করা টাউ নিওট্রিনোকে খুঁজে পাওয়া যায়।
২০০২- সূর্যের নিউট্রিনো সমস্যার সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীদের নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়।
তথ্যসুত্র:
1. Ghost of the Universe; Frank Close
2. Neutrino Experiments Light the Way to New Physics; Martin Hirsch
3. অপ্রকাশলোকের সন্ধানে; ড. এ. এম. হারুন-অর-রশিদ
4. বিজ্ঞান প্রজন্ম; প্রথম আলো
5. নিউট্রিনো ছোটে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে? ; তানভীর আহমেদ ভুঁইয়া
6. Wikipedia : Neutrino
7. আরও একটুখানি বিজ্ঞান: মু.জা.ই.
8. আগামী প্রজন্মের বিজ্ঞান: ভবেশ রায়
9. Neutrinos not faster than light : Nature Magazine
2 মন্তব্য:
শেষ পর্যন্ত নিউট্রিনোর বেগ কত নির্ণয় হয়েছে ?
শেষ পর্যন্ত ভরসহ নিউট্রিনোর বেগ কত নির্ণয় হয়েছে ?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন