আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

মহাবিশ্ব লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মহাবিশ্ব লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, আগস্ট ১৮, ২০১৪

সংলাপ: মহাবিশ্ব সসীম না অসীম?




ইতিহাসের সেরা ছাত্র-শিক্ষক জুটি হলেন প্লেটো-সক্রেটিস, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ খুবই কম। সক্রেটিস মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছিলেন আর প্লেটো সক্রেটিসের শিক্ষাকে সংরক্ষণ করেছে সংলাপের মাধ্যমে। "প্লেটোর সংলাপ" নামে পরিচিত এই সাহিত্যভাণ্ডার মানবতার জন্য অনেক কিছু। পড়লেই বোঝা যায় কত সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করতেন সক্রেটিস আর কত সূক্ষ্ণভাবে তা অনুসরণ করতো প্লেটো।

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের। কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি দর্শনের প্রয়োজনীয়তা। জন্ম নিয়েছে বিজ্ঞানের দর্শন। দর্শন বলতে আসলে প্রজ্ঞার প্রতি ভালোবাসাকে বোঝায়। এই ভালোবাসা নিঃশর্ত, সেখানে আত্মপ্রত্যয় থাকলেও আত্মম্ভরিতা নেই। দর্শনানুরাগীরা শিশুর মত বিস্মিত হতে জানে, এ এমন এক বিস্ময় যা থেকে হাজারটা প্রশ্নের জন্ম হয়। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই প্রজ্ঞার সন্ধান পেয়ে যায় তারা।
বাস্তব জীবনেও দেখা যায়, যেকোন বিষয় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরলে বোঝা যায় বেশী। বিজ্ঞানের জগতেও এই সূত্র খাটে। এজন্যই বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন সাইটে "ফ্রিকোয়েন্টলি আস্ক্‌ড কোয়েশ্চেন" (ফ্যাক) এর সমাহার দেখা যায়। বিজ্ঞানের মজার বিষয়গুলোকে আমি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। তবে এগুলোকে ফ্যাক বলবো না। ফ্যাক বিষয়টা অনেক হালকা ও রসহীন।
আমি বরং প্লেটোর সংলাপের আদলে বিজ্ঞান সংলাপ শুরু করছি। এজন্য প্রাথমিকভাবে দু'টি চরিত্র ঠিক করেছি, একজন শিক্ষক আরেকজন ছাত্র। শিক্ষকের নাম দিয়েছি সক্রেটিস, আর ছাত্রের নাম প্লেটো। ভবিষ্যতে আরও চরিত্র আসতে পারে। তবে আপাতত এই দু'জনই কাজ চালিয়ে নেবে। আলোচনা দর্শনকেন্দ্রিক না হয়ে বিজ্ঞানকেন্দ্রিক হবে। সক্রেটিস একেবারে সঠিক উত্তর দেবেন, প্লেটো সবসময়ই চাইবে দর্শনকেন্দ্রিক হয়ে পড়তে। তাকে দর্শনমুখীনতা থেকে ফিরিয়ে বিজ্ঞানমুখী করে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
এটাকে কিন্তু নাটক বলা যাবে না। নাটক লেখার সাধ্যি আমার নাই। এটা দুই চরিত্রের সংলাপ কেবল। কোন কাহিনী বা অনুষঙ্গ নাই। উদ্দেশ্য শুধুই প্রকৃতির নিয়ম অনুসন্ধান।
আরেকটা বিষয়, সংলাপের প্রতিটি পর্বই স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, ধারাবাহিক কিছু না। তাই আগেরটা না পড়লেও পরেরটা পড়তে বাঁধা নেই।
আমাদের যুগের সক্রেটিস-প্লেটো মহাবিশ্ব সসীম নাকি অসীম, এই নিয়ে তাদের সংলাপ শুরু করছে।
সক্রেটিস: এখন পর্যন্ত দেখা মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তু হল "অ্যাবেল ১৮৩৫ আইআর১৯১৬" নামক ছায়াপথ। "ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি" থেকে এটা আবিষ্কার করা হয়েছে। অ্যাবেলের দূরত্ব ১৩.২৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। অর্থাৎ অ্যাবেলকে আমরা ১৩.২৩ বিলিয়ন বছর আগের অবস্থায় দেখছি। এতো দূর, তারপরেও যেন নগণ্য। কারণ এতো দূর দেখেও কোন সীমার সন্ধান পাইনি আমরা। পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ভিত্তিতে বলতেই হয়, মহাবিশ্ব অসীম।
প্লেটো: কিন্তু পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষণের বাইরেও তো একটা বিজ্ঞান রয়ে গেছে। সে বিজ্ঞানের নাম গণিত। গণিত দিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা কি সম্ভব হয়েছে?
সক্রেটিস: সসীম-অসীমের এ প্রশ্নে গণিত না এনে উপায় নেই। প্রশ্নটা চমৎকার। তবে গণিতকে কেউ প্রমাণ হিসেবে নেয় না। আইনস্টাইন আপেক্ষিকতা গণিত দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন বলেই প্রথমটায় সাড়া পেয়েছেন কম। কিন্তু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সমীকরণের পক্ষে দলিল পাবার পর এর থেকে গুরুত্ববহ আর কিছু ছিল না।
প্লেটো: বর্তমানে বিজ্ঞান যেহেতু আমাদের পর্যবেক্ষণকে ছাড়িয়ে গেছে, সেহেতু গণিতের কাছে ফিরে আসতেই হয়। গণিত কি এতোদিনে সমস্যাটার সমাধান করে ফেলেনি?
সক্রেটিস: আবারও গণিতের কাছে ফিরে আসার জন্য সাধুবাদ। শুধু এই যুগ না, সব যুগেই বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের থেকে এগিয়ে ছিল। গণিতের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গণিত যায় আগে, তার পিছে পিছে যায় পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান। সসীম-অসীম প্রশ্নে গণিতের নির্দিষ্ট অবস্থান আছে। তবে সেটা বোঝার আগে মেনে নিতে হবে, ফ্রেড হয়েলের স্থিতিশীল মহাবিশ্বের তত্ত্ব ভুল। এটা মেনে নেয়ার অর্থই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। সম্প্রসারণের সাথে অসীমের সম্পর্ক নেই। কিন্তু সম্প্রসারণ মেনে নিলে অসীম বোঝাতে সুবিধা হয়। হ্যা, আপেক্ষিকতাভিত্তিক গণিত বলছে, মহাবিশ্ব অসীম।
প্লেটো: আপেক্ষিকতাভিত্তিক গণিতের এই বিষয়টা তো এখন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে চলে গেছে। জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের গবেষক সম্প্রদায়ই কি দায়িত্বটা নিচ্ছেন?
সক্রেটিস: জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানকে আরও সরু করে বিশ্বতত্ত্বের উৎপত্তি ঘটেছে। এটা এখন বিশ্বতত্ত্বের অংশ। ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্বের বিপরীতে কাজ করে এই বিশ্বতত্ত্ব। বিশ্বতত্ত্ব মহা বিস্ফোরণের ঠিক আগ মুহূর্তও অসীম দিয়ে ব্যাখ্যা করে।
প্লেটো: তাহলে, অসীম মহাবিশ্বের ধারণাটা ঠিক কেমন? বিশ্বতত্ত্ব মহা বিস্ফোরণ দিয়ে কিভাবে অসীমকে ব্যাখ্যা করে?
সক্রেটিস: তাহলে মহা বিস্ফোরণ থেকেই শুরু করতে হয়। একটা অসীম ঘনত্ব ও শূন্য আয়তনের বিন্দুর মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটার ঠিক ১০টু দ্য পাওয়ার-৪৫ সেকেন্ড পর স্থান-কালের সৃষ্টি হয়েছে।
প্লেটো: যে বিন্দুটা বিস্ফোরিত হয়েছে সেটা কোথায় ছিল?
সক্রেটিস: অসীম ঘনত্বের বিন্দুটা বিস্ফোরিত হয়েই কিন্তু অসীম মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে। আদি বিন্দুটাও অসীমের মধ্যে ছিল। বিস্ফোরণের বিষয়টা এমন না যে, একটি বিন্দু থেকে সবকিছু ছড়িয়ে পড়ছে। বিস্ফোরণের আগে পড়ে সবসময়ই অসীমতাকে দখল করে ছিল সে। এ কারণে মহাবিশ্ব সব দিক থেকে সমভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এ কারণেই বর্তমান মহাবিশ্ব সমসত্ব। অর্থাৎ সকল বিন্দু থেকেই মহাবিশ্বকে দেখতে একরকম লাগে।
প্লেটো: কিন্তু, অসীম একটা জিনিস আরেকটা অসীমের মধ্যে থাকে কি করে?
সক্রেটিস: এখানেই বিজ্ঞানকে ছাড়িয়ে প্যারাডক্স তথা হেঁয়ালির সূচনা। তবে এই হেঁয়ালির পেছনেও যুক্তি আছে। হিলবার্টের অসীম কক্ষবিশিষ্ট হোটেলের হেঁয়ালি দিয়ে অসীমতাকে ব্যাখ্যা করা যায়। এটা অসীম হেঁয়ালি নামেও পরিচিত।
প্লেটো: অসীম হেঁয়ালি কি অসীমের মধ্যে সবকিছুকে গ্রহণ করে নেয়ার মত কোন গোঁড়া কিছু?
সক্রেটিস: গোঁড়াই বলতে হবে। কিন্তু একটা সাধারণ বাখ্যা আছে এর পেছনে: দুটি হোটেল কল্পনা কর যার একটিতে কক্ষ সংখ্যা সসীম এবং অন্যটিতে অসীম। ধরা যাক, দুটি হোটেলের সব রুমই বুক হয়ে গেছে। সসীম কক্ষের হোটেলে নতুন কেউ আসলে ম্যানেজার তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু অসীম কক্ষের হোটেলে কেউ আসলে সানন্দে জায়গা করে দেবেন ম্যানেজার।
প্লেটো: এটা কিন্তু সাধারণ ব্যাখ্যা হল না। অসীম সবকিছু নিতে পারে অনেকটা তেমনই।
সক্রেটিস: সাধারণ ব্যাখ্যাটা প্রক্রিয়া নিয়ে। কিভাবে অন্যদেরকে জায়গা করে দিবেন অসীম কক্ষের হোটেলের ম্যানেজার? প্রক্রিয়াটা হল তিনি ১ম কক্ষের জনকে দ্বিতীয় কক্ষে পাঠিয়ে দেবেন, দ্বিতীয় কক্ষের জনকে তৃতীয়টিতে, তৃতীয়র জনকে চতুর্থটিতে এবং এভাবে সবগুলো। এভাবে প্রথম কক্ষটি খালি হয়ে যাবে।
প্লেটো: অসীম কক্ষবিশিষ্ট কোন হোটেলে যদি অসীম সংখ্যাক নতুন পর্যটক এসে উপস্থিত হয়, তখন কি করবেন?
সক্রেটিস: ম্যানেজার প্রথম কক্ষের লোককে তৃতীয় কক্ষে পাঠিয়ে দেবেন, দ্বিতীয় কক্ষের লোককে চতুর্থ কক্ষে, তৃতীয় কক্ষের লোককে ষষ্ঠ কক্ষে এবং এভাবে পাঠাতে থাকবেন। স্পষ্টতই বিজোড় কক্ষগুলো খালি হয়ে যাবে। অসীম স্থানান্তরের কারণে অসীম সংখ্যাক বিজোড় কক্ষ খালি হবে, সেখানে অসীম সংখ্যক নতুন পর্যটক জায়গা পেয়ে যাবেন।
প্লেটো: হিলবার্টের হেঁয়ালিটা আসলেই বিভ্রান্তিকর। কিন্তু যুক্তির খাতিরে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তবে আমার মনে হচ্ছে, অসীম নিয়ে আলোচনায় সমাধানের থেকে প্রশ্ন উঠে আসে বেশী।
সক্রেটিস: এর কারণ আমাদের অজ্ঞতা। এক সময় মানুষ কিছু না বুঝলে সেখানে ঈশ্বরকে স্থাপন করতো। এখন বিজ্ঞজনেরা তা করতে চাচ্ছে না। অসীম তাই অনেক কিছুর সমাধান দিচ্ছে। যদিও সেটা এখনও হেঁয়ালির পর্যায়ে।
প্লেটো: অনেকে বলেন একটি অসংজ্ঞায়িত বিন্দু থেকে সম্পূর্ণ নতুন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়নি। বরং আগের মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে হতে শূন্যে বিলীন হয়ে যাবার আগে এমন কিছু ঘটেছিল যার কারণে শূন্যে বিলীন না হয়ে নতুন আরেকটি মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এই তত্ত্বের সাথে কি বিশ্বতত্ত্বের সাযুজ্য আছে?
সক্রেটিস: বর্তমান মহাবিশ্বের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এটা আদৌ সংকুচিত হবে না। প্রসারিত হতে হতে একসময় সব শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাহলে সংকোচনের ব্যাপারটা আসে না। অবশ্য গণিতে একটি ধ্রুবক আছে যার মান পরিবর্তন করে মহাবিশ্বকে সংকুচিত করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সংকোচন হতেও পারে। আর সংকোচন হলে শূন্যে আসার আগে আবার প্রসারণও শুরু হতে পারে। এভাবে স্পন্দনশীল মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। তাতেও কোন সমস্যা নেই। অসীমের মধ্যেই স্পন্দনশীল অসীম মহাবিশ্বের বিবর্তন ঘটবে।
প্লেটো: আর বহুবিশ্বের ধারণার কি হবে?
সক্রেটিস: হ্যা, অনেকে বলছেন মহা বিস্ফোরণ হল কৃষ্ণ বিবরের উল্টো। কৃষ্ণ বিবর সবকিছু নিজের মধ্যে নিয়ে নেয়। আর মহা বিস্ফোরণ সবকিছুকে নিজের ভেতর থেকে বের করে দেয়। তাহলে অসীম সংখ্যক মহা বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে, যেমন অনেক অনেক কৃষ্ণ বিবর আছে। এক্ষেত্রেও সমস্যা নাই। হিলবার্ট বলেন, অসীমের মধ্যে অসীম সংখ্যক অসীম মহাবিশ্ব থাকতেই পারে।
প্লেটো: তাহলে অসীমকেই মেনে নিলাম। কারণ বিশ্বতাত্ত্বিক গবেষণার মূলধারা অসীমকে ঘিরেই। কেউ প্রথাবিরোধী হতে চাইলে সসীম নিয়েও নতুন মাত্রায় কাজ শুরু করতে পারে। বিজ্ঞান আমাদেরকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।

লেখাটা "সচলায়তন" থেকে নেয়া। লিখেছেন শিক্ষানবিশ।



বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০১৪

অনন্ত মহাবিশ্বের সন্ধানে





আপনার উর্বর মস্তিষ্কের রঙিন কল্পণায়ও কি কখনও - একটি বারও মনে হয়েছে, এই যে আকাশের বুকে হাজারো লক্ষ কোটি গ্রহ-তারা-নিহারীকা আর গ্রহানুপুঞ্জ নিয়ে তৈরী এই যে আমাদের এত পরিচিত বিশাল মহাবিশ্ব, এর বাইরেও এমনি ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্ব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে?এর মধ্যে কোন কোনটিতে থাকতে পারে অবিকল আমাদের এই পৃথিবীর মতই মলয়শীতলা একটি গ্রহ, এমনকি সে গ্রহে থাকতে পারে আপনার আবিকল চেহারার এক 'জমজ ভাই'? বিশ্বাস করুন, নীলক্ষেতের সোনামিয়ার গাঁজায় দম দিয়ে কিন্তু এ লেখা শুরু করিনি। দিব্যি সুস্থ্য মাথায়ই লিখছি এগুলো। ট্রিয়ন, অ্যালেন গুথ, ম্যাক্স টেগ মার্ক আর লিন্ডের গবেষণার ফলাফল যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে এমন জোড়ালো সম্ভাবনা কিন্তু আজ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না মোটেই। আসলে আধুনিক পদার্থবিদের একটি অত্যন্ত বিপ্লবাত্মক মতবাদ হল মালটিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা। এই ধারণাটি বলছে এই যে আমাদের পরিচিত মহাবিশ্ব -এটি কোন অনন্য বা ইউনিক কিছু নয়, বরং এমনি ধরনের হাজারো মহাবিশ্ব হয়ত ছড়িয়ে আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা হয়ত একদমই ওয়াকিবহাল নই। অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাটি কোন ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথা নয়, নয় কোন স্টারট্রেক মুভি বা আসিমভের সায়েন্সফিকশন। অতি সংক্ষেপে অনন্ত মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক ধারণাটি এরকম :আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে, এবং হয়ত বাস্তবে ঘটেছেও। এই একাধিক মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ব্যাপারটি প্রাথমিকভাবে ট্রিয়ন আর পরবর্তীতে মূলতঃ আদ্রে লিন্ডের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বলা হয়ে থাকে সৃষ্টির উষালগ্নে ইনফেçশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত বুদ্বুদ (Expanding Bubbles) থেকে আমাদের মহাবিশ্বের মতই অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে, যেগুলো একটা অপরটা থেকে সংস্পর্শবিহীন অবস্থায় দূরে সরে গেছে। এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতেই হয়ত আমরা অবস্থান করছি অন্য গুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে একেবারেই জ্ঞাত না হয়ে।লিন্ডের সাম্প্রতিক তত্ত্ব বলছে কেওটিক ইনফেçশনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য সম্প্রসারিত বুদ্বুদ এবং প্রতিটি সম্প্রসারিত বদ্বুদই আবার জন্ম দিয়েছে এক একটি 'বিগ-ব্যাং'-এর। আর সেই এক একটি বিগ-ব্যাং পরিশেষে জন্ম দিয়েছে এক একটি পকেট মহাবিশ্বের। আমরা এ ধরনেরই একটি পকেট মহাবিশ্বে বাস করছি।বিজ্ঞানীরা মনে করেন মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বর ধারণাটি 'ইন্টিলিজেন্ট ডিজাইন'-এর প্রবক্তাদের একটি যোগ্য জবাব দিতে পেরেছে। ব্যাপারটি বোঝাবার আগে আই.ডিওয়ালাদের সম্পর্কে এই ফাঁকে কিছু কথা বলে নেই। পাঠকরা নিশ্চয় অবগত যে, সম্প্রতি বেশ কিছু দার্শনিকদের পক্ষ থেকে নতুন কিছু যুক্তির অবতারনা করে একটু ভিন্নভাবে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে । এঁদের যুক্তি হল, আমাদের বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড এমন কিছু চলক বা ভ্যারিয়েবলের সূক্ষ্ন সমন্নয়ের (ফাইন টিউনিং) সাহায্যে তৈরী হয়েছে যে এর একচুল হের ফের হলে আর আমাদের এ পৃথিবীতে কখনই প্রাণ সৃষ্টি হত না। বিশেষতঃ জন ডি. ব্যরো এবং ফ্রাঙ্ক জে. টিপলার নানা ধরনের রহস্যময় মহাজাগতিক ন'যোগাযোগ' তুলে ধরে একটি বই লিখেছেন ১৯৮৬ সালে, নাম-'The Anthropic Cosmological Principle'তাঁদের বক্তব্য হল, আমাদের মহাবিশ্বে গ্র্যাভিটেশনাল অথবা কসমলজিকাল ধ্রুবকগুলোর মান এমন কেন, কিংবা মহাবিশ্বের চেহারাটাই বা এমন কেন হয়েছে তার উত্তর পেতে হলে ব্যাখ্যা খুঁজতে হবে পৃথিবীতে প্রাণ এবং মানুষের উপস্থিতির দিকে তাকিয়ে। পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির জন্য সর্বোপরি মানুষের আবির্ভাবের জন্য এই মৌলিক ধ্রুবক আর চলকগুলোর মান ঠিক এমনই হওয়া দরকার ছিল - সে জন্যই ওগুলো ওরকম। দৈবক্রমে ওগুলো ঘটে নি, ররং এর পেছনে হয়ত এক বুদ্ধিদীপ্ত সত্ত্বার একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। মানুষকে কেন্দ্রে রেখে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের নিয়ম-নীতিগুলোকে ব্যাখ্যা করবার এই যুক্তিকে বলা হয় 'অ্যানথ্রোপিক আর্গুমেন্ট' বা 'নরত্ববাচক যুক্তি' (আমি আমার আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রীবইটিতে এ নিয়ে বিষদভাবে লিখেছি। )।অনেক বিজ্ঞানী বলেন খুব সীমিত পরিসরে জীবনের বিকাশ ঘটেছে; এমন কেন হয়েছে তার উত্তর পেতে হলে ব্যাখ্যা খুঁজতে হবে পৃথিবীতে প্রাণ এবং মানুষের উপস্থিতির দিকে তাকিয়ে।কিছুদিন আগেও বিজ্ঞানীরা অনেকটাই হতবিহবল ছিলেন এই ভেবে যে এই রহস্যময় যোগাযোগ গুলো (অ্যান্থ্রোপিক নম্বরগুলো) আমাদের অস্তিত্বের পেছনে কেন এতটাই জরুরী হয়ে উঠল। আই.ডি ওয়ালারা স্বভাবতই এর পেছনে তাদের তথাকথিত 'ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট' এর হাত দেখতে পেতেন, আর আই.ডি বিরোধীরা বলতেন এ নিতান্তই 'কাকতালীয়' ব্যাপার, যাকে বলে 'ঘটনাচক্রের সমাপতন' (coincidence)অনেকে আবার এই দু'দলের মাঝামাঝি একটা অবস্থানে থেকে ভাবতেন, আমরা এখনো পরিপূর্ণ তত্ত্ব সম্পর্কে জানি না; কাজেই হলফ করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ১৯৮৮ সালে এমনি ধরনের একটি ধারণা ব্যক্ত করে বলেন :'বিজ্ঞানের যে সূত্রগুলো সম্বন্ধে আমরা বর্তমানে অবগত, তাতে অনেক মৌলিক সংখ্যা রয়েছে। যেমন, ইলেকট্রনে বৈদ্যুতিক চার্জের পরিমান, প্রোটন-ইলেকট্রনের মধ্যকার ভরের অনুপাত ইত্যাদি। আমরা এখনো, অন্তত এই মুহূর্তে - কোন ধরনের তত্ত্বের সাহায্যে এই সংখ্যাগুলো ব্যাখ্যা করতে পারছি না - আমরা কেবল পর্যবেক্ষণ দ্বারাই এগুলো সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। এমন হতে পারে আমরা কোন দিন ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিস্কার করব আর সেগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বানী করতে পারব, কিন্তু এটাও হতে পারে যে, ও সংখ্যাগুলোর সবগুলোই কিংবা অনেকগুলোই এক মহাবিশ্ব থেকে আরেক মহাবিশ্বে ভিন্ন রকম হবে, এমনকি একই মহাবিশ্বেও অন্যরকম হতে পারে। কিন্তু অত্যাশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে সংখ্যাগুলোর মান খুব সূক্ষভাবে সমন্নিত আছে যা আমাদের জীবনের বিকাশকে সম্ভব করে তুলেছে। মালটিভার্স হাইপোথিসিস অ্যান্থ্রোপিক আর্গুমেন্টের একটি সহজ সমাধান দেয়।যেহেতু বিজ্ঞানীরা এ সমস্ত রহস্যময় ঘটনার পেছনে কোন তত্ত্ব বা থিওরী খুঁজে পাচ্ছিলেন না - ওই সূক্ষ-সমন্নয় আর নরত্ববাচক যুক্তিগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীদের অবচেতন মনে একটা খচখচানি থেকেই গিয়েছিল; মালটিভার্স তত্ত্ব কিন্তু তা থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পেরেছে। সাদা মাঠা কথায় এ তত্ত্ব বলছে যে, হাজারো-লক্ষ-কোটি মহাবিশ্বের ভীরে আমাদের মহাবিশ্বও একটি। স্রেফ সম্ভাবনার নিরিখেই একটি মহাবিশ্বে চলকগুলোর মান এমনিতেই অমন সূক্ষভাবে সমন্নিত হতে পারে, অন্যগুলোতে হয়ত হয়নি। আমাদের মহাবিশ্বে চলকগুলো কোন একভাবে সমন্নিত হতে পেরেছে বলেই এতে প্রাণের উন্মেষ ঘটেছে; এতে এত আশ্চর্য হবার কিছু নেই! অধ্যাপক রীস সেটিই খুব চমৎকারভাবে একটি উপমার মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন
অসংখ্য মহাবিশ্বের ভীরে আমাদের মহাবিশ্বও একটি। অন্য মহাবিশ্বে বিজ্ঞানের সূত্র আর চলকগুলো হয়ত একেবারেই অন্যরকম হবে।... কাজেই ঘড়ির কারিগরের সাদৃশ্য এখানে একেবারেই অচল। তার বদলে বরং আমাদের বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডকে অনেকটা পরিত্যক্ত সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড়ের দোকানের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। দোকানের মজুদ যদি বিশাল হয় তবে দোকানের কোন একটি জামা আপনার গায়ে ঠিকমত লেগে গেলে আপনি নিশ্চয় তাতে বিস্মিত হবেন না! ঠিক একইভাবে আমাদের মহাবিশ্ব যদি ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মহাবিশ্বের একটি হয়ে থাকে, দোকানের একটি জামার মতই সূক্ষ-সমন্নয় দেখে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।কাজেই এই ধারণা অনুযায়ী আমাদের মহাবিশ্ব যাকে এতদিন প্রকৃতির পুরো অংশ বলে ভেবে নেওয়া হত, আসলে হয়ত এটি এক বিশাল কোন মহাজাগতিক দানবের খুব ক্ষুদ্র অংশবিশেষ ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের অবস্থাটা এতোদিন ছিল সেই বহুল প্রচলিত 'অন্ধের হস্তি দর্শন' গল্পের অন্ধ লোকটির মত - হাতীর কান ছুঁয়েই যে ভেবে নিয়েছিলো ওইটাই বুঝি হাতীর পুরো দেহটা! এখানেই কিন্তু গল্প শেষ নয়। এই মালটিভার্স থিওরীর বাই প্রোডাক্ট বা উপজাত হিসেবে আবার ইদানিং উঠে এসেছে আরো এক ডিগ্রী মজাদার তত্ত্ব - সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা প্যারালাল ইউনিভার্স। সমান্তরাল মহাবিশ্ব নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড ডেটচস সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন The Fabric of Reality: The Science of Parallel Universes - And Its Implications নামে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাশাপাশি সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা বৈজ্ঞানিক সাময়িকীগুলোতেও ঠাঁই করে নিয়েছে। ২০০৩ সালের মে মাসের সায়েন্টিফিক আমেরিকানের সঙ্খ্যায় ম্যাক্স টেগমার্ক Parallel Universes নামের একটি প্রবন্ধ লেখেন। লেখাটিতে টেগমার্ক তিনটি মডেলের সাহায্যে অত্যন্ত বিস্তৃত ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে 'প্যারালাল ইউনিভার্স' এর ধারণাকে পাঠকদের মাঝে তুলে ধরেন । প্যারালাল ইউনিভার্সের তত্ত্ব বলছে যে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ কোটি মহাবিশ্বের মধ্যে কোন কোনটি যে আকার, আয়তন আর বৈশিষ্ট্যে একদম ঠিক ঠিক আমাদের মহাবিশ্বের মতই হবে না, এমন তো কোন গ্যারান্টি নেই। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোও সেই মহাবিশ্বে একই রকমভাবে কাজ করার কথা। ম্যাক্স টেগমার্ক আমাদের জানা গনিতের সম্ভাবনার নিরিখেই হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, এই মহাবিশ্ব থেকে পায় ১০<sup>১০ <sup>২৮ </sup> </sup>মিটার দূরে আপনারই এক 'আইডেন্টিকাল টুইন' হয়ত
কম্পিউটারের সামনে বসে এই লেখাটি পড়ছে, তা আপনি কোন দিন জানতেও পারবেন না!

বেশ বুঝতে পারছি মাল্টিভার্সের ধারণাই হয়ত পাঠকদের অনেকে হজম করতে পারছেন না, তার উপর আবার প্যারালাল ইনিভার্স, আইডেন্টিকাল টুইন - হেন তেন চলে আসায় নিশ্চয় মাথা তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, উপরের ধারণা, কিংবা তত্ত্বগুলো যতই আজগুবি মনে হোক না কেন ওগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা পদার্থবিজ্ঞানের কোন নিয়ম নীতি লংঘন করেননি।
তত্ত্ব হিসেবে মাল্টিভার্সের ধারণা যে সমালোচনার সম্মুখীন হয়নি তা নয়। যথেষ্টই হয়েছে। মাল্টিভাস নামের এই বিপ্লবাত্মক ধারণার প্রথম সমস্যা হল, এ ধারণা যে সঠিকই তা এই মুহূর্তে পরীক্ষা করে বলবার কোন উপায় নেই। কার্ল পপার 'ফলসিফায়েবিলিটি'র যে বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানের সংজ্ঞা হিসেবে নির্ধারিত করে রেখেছেন, তার আওতায় কিন্তু মাল্টিভার্স এখনও পড়ে না। কার্লপপারের অনুসারীরা বলেন, গাণিতিক বিমূর্ততায় ঠাসা মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা যতটুকু না বাস্তবতার কাছাকাছি, তার চাইতে ঢের বেশী কাছাকাছি অধিপদার্থবিদ্যার (মেটা ফিজিক্স)। কাজেই এটি বিজ্ঞান হয় কি করে? কিন্তু মাল্টিভার্সের সমর্থকদেরও যুক্তির কোন অভাব নেই। তারা বলেন- ওই অধিপদার্থবিদ্যা আর পদার্থবিদ্যার মাঝখানের সীমারেখাটা যতই দিন যাচ্ছে ততই ছোট হয়ে আসছে। অতীতে আমরা দেখেছি পর্যবেক্ষনবিরোধী বহু তত্ত্বই - যেমন গোলাকার পৃথিবীর ধারণা, অদৃশ্য বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র, উচ্চ গতিতে ভ্রমণকালে সময় শ্লথতা, কোয়ান্টাম উপরিপাতন, স্থান-কালের বক্রতা, কৃষ্ণগহবর ইত্যাদি সবকিছুই শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের অংশ হয়ে গেছে। অনন্ত মহাবিশ্ব সেই তালিকায় এক নতুন সংযোজনমাত্র।
দর্শনশাস্ত্রে 'অক্কামের ক্ষুর' নামে একটি সূত্র প্রচলিত আছে। সোজা বাংলায় এই সূত্রটি বলে - অনর্থক বাহুল্য সর্বদাই বর্জনীয়। আইডির সমর্থক অধ্যাপক জর্জ এলিস অক্কামের ক্ষুরকে ব্যবহার করেছেন মাল্টিভার্সের ধারণার বিরুদ্ধে, বলেছেন এই তত্ত্ব অক্কামের ক্ষুরের সুস্পষ্ট লংঘন। তাঁর যুক্তি হল, একটা মহাবিশ্ব দিয়েই যখন সমস্যা সমাধান করা যায়, হাজার কোটি মহাবিশ্ব টেনে এনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা আসলে বাতুলতা মাত্র, অনর্থক অপচয়। কিন্তু এ যুক্তিও ধোপে টেকেনি। যেমন, কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিকটর স্টেঙ্গর তার 'টাইমলেস রিয়ালিটি' এবং 'হ্যাজ সায়েন্স ফাউন্ড গড' বইয়ে এই যুক্তি খন্ডন করে বলেন, পদার্থবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক তত্ত্বগুলোর কোনটাই অসংখ্য মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে বাতিল করে দেয় না। বরং যেখানে লিন্ডের তত্ত্ব কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টির দিকেই ইঙ্গিত করছে, সেখানে কেউ যদি অযথা বাড়তি একটি প্রকল্প আরোপ করে বলেন আমাদের এই মহাবিশ্ব ছাড়া আর কোন মহাবিশ্ব নেই, কিংবা কখনই তৈরী হওয়া সম্ভবপর নয়, তবে সেটাই বরং হবে অক্কামের ক্ষুরের লংঘন। অধ্যাপক স্টেঙ্গরের মতে, লিন্ডের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা সমাধানের ভুল ধরিয়ে দিয়ে নিজের সজ্ঞাত ধারণাটি -'একটি মহাবিশ্বই টিকে থাকতে পারবে' - প্রামাণ করার দায়িত্ব থাকছে কিন্তু ওই দাবীদারদের ঘারেই -যারা একটিমাত্র মহাবিশ্বের ধারণায় আস্থাশীল । এখন পর্যন্ত কেউই সে ধরণের কোন 'স্পেশাল নিয়ম' হাজির করতে পারেননি যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে কেবল একটি মহাবিশ্বই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে, অন্যগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
সম্প্রতি কানাডার প্রিমিয়ার ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক লি স্মোলিন একটু অন্যভাবে সমস্যাটা নিয়ে ভেবেছেন। কেন আমাদের মহাবিশ্বই টিকে রইল, অন্যগুলো রইলোনা - এ প্রশ্নটির সমাধান দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন বায়োলজি বা জীববিদ্যা হয়ত এক্ষেত্রে আমাদের পথ দেখাতে পারে। জীববিজ্ঞানে এ ধরনের ঘটনার হাজারো উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। কড মাছ মিলিয়ন মিলিয়ন ডিম পাড়ে, তার মধ্যে খুব কমই শেষ পর্যন্ত নিষিক্ত হয়, আর নিষিক্ত ডিম থেকে জন্ম নেয়া অধিকাংশ পোনাই আবার বিভিন্ন কারণে মারা যায়, কিংবা অন্য মাছদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, শেষ পর্যন্ত দেখা যায় খুব কম পোনাই টিকে থাকে আর তারপর পূর্ণাংগ মাছে পরিণত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখিয়েছেন যে একটা কড মাছের ডিমের নিরানব্বই শতাংশই প্রথম মাসে কোন না কোন ভাবে ধ্বংস হয়ে যায়, আর বাকি যা বেঁচে থাকে তারও নব্বই ভাগ প্রথম বছরেই ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ সহ প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রাণীরই কোটি কোটি স্পার্মের প্রয়োজন হয় কেবল এটি নিশ্চিত করতে যে এদের মধ্যে একটি মাত্র স্পার্মই বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করবে আর শেষপর্যন্ত পরবর্তী প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখবে। অর্থাৎ প্রকৃতি তুলনামুলকভাবে বেশী উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের টিকিয়ে রাখে। এ ব্যাপারটিকেই চলতি কথায় যোগ্যতমের বিজয় বা 'সার্ভাইবাল অব ফিটেস্ট' বলা হয়। ডারউইন প্রকৃতির এই নির্বাচন প্রক্রিয়ারই নাম দেন 'প্রাকৃতিক নির্বাচন' যার মাধ্যমে তিনি জীবজগতের বিবর্তনকে সার্থকভাবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন।লি স্মোলিন ভাবলেন জীবজগতের বিবর্তনের নিয়মের মত 'কিছু একটা' সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্বের বিবর্তনের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে কিনা। ইনফেçশনের ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্বের ইতিহাসে যে অগুনতি সিঙ্গুলারিটি তৈরী হয়েছিলো, এমনও তো হতে পারে যে, এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত একটিমাত্রই টিকে রইল, যেভাবে মানবদেহে নিষেক ঘটানোর অভিপ্রায়ে মিলিয়ন শুক্রানুর মধ্যে টিকে রয় একটিমাত্র স্পার্ম বা শুক্রানু। তাহলে কি যোগ্যতম শুক্রানুর মত কোন এক যোগ্যতম সিঙ্গুলারিটি থেকেই 'প্রাকৃতিক নির্বাচনের' মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে আমাদের এই পরিচিত মহাবিশ্ব? কে জানে, হতেও তো পারে! তাই যদি হয়, তবে 'ফাইন-টিউনিং' আর 'অ্যান্থ্রোপিক আর্গুমেন্ট'-এর জন্য অতিপ্রাকৃত স্বর্গীয় সমাধান খুঁজে আর লাভ নেই। কারণ ডারউইনীয় বিবর্তনবাদী ধারণা বলছে হয়ত এ প্রকারণগুলোই আমাদের মহাবিশ্বকে অন্যগুলো থেকে অধিকতর 'যোগ্যতম' হিসেবে আলাদা করে দিয়েছিলো! তাই এটি টিকে গেছে।
অনন্ত মহাবিশ্বের সমস্যা সমাধানে লি স্মোলিনের এই বিবর্তনবাদী দর্শন খুব আকর্ষনীয় সমাধান দিলেও এটি জ্যোতির্পদার্থবিদদের কাছ থেকে কখনই তেমন সমর্থন পায়নি। এর কারণ মুলতঃ দুটি। অধিকাংশ পদার্থবিদদের সবাই পদার্থবিদ্যার জানা নিয়ম নীতির মধ্যে থেকেই এই রহস্যের সমাধান চান- হঠাৎ করেই এক ভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক নিয়মের মাধ্যমে একধরনের 'গোঁজামিল' দেওয়া ব্যাখ্যা নয়; আর তাছাড়া লি স্মোলিন যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলছেন তার কোন গানিতিক মডেল উপহার দিতে পারেন নি যা পদার্থবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্যতার এক অন্যতম পূর্বশর্ত।যতদিন না এই শর্ত পূরণ হচ্ছে ততদিন কিন্তু থেকে যাচ্ছে আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও হাজার-কোটি-অনন্ত মহাবিশ্বের অস্তিত্বের এক বিশাল সম্ভাবনা আর একই সাথে থেকে যাচ্ছে এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের বুকে কোথাও না কোথাও আপনার যমজ ভাই থেকে যাবার সম্ভাবনাও, যে ভাইটির সাথে কোন দিনই হয়ত আপনার মোলাকাত হবে না



লেখাটা দৈনিক সমকালে ১৫ জুলাই ২০০৬ এ প্রাকশিত হয়েছিল




বৃহস্পতিবার, মার্চ ০৬, ২০১৪

মহাবিশ্বের সীমানা পেরিয়ে--- বহুদূরে

সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষের জানার আগ্রহ।আর সেই আগ্রহ থেকেই হাজার প্রশ্নের উৎপত্তি। সেই সকল প্রশ্নেরই উত্তর দিব আজ_____ 
কয়েক শতাব্দী আগেও আমাদের মহাবিশ্ব ছিল আকাশে দেখা অগণিত তারার মধ্যে সীমাবদ্ধ, আকাশের এই তারাগুলোর আবর্তন দেখে তখন পৃথিবীকেই বসিয়ে দেয়া হয়েছিল মহাবিশ্বের কেন্দ্রে। তখন আমরা জানতাম সূর্যই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। এরপর সময় কাটল অনেক। অ্যারিস্টকার্কাস আসলেন, আসলেন অনেক মুসলিম বিজ্ঞানি, আমাদের উপমহাদেশের অসংখ্য জ্ঞানতাপস,ইউরোপে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিওর মত অনেকেই। দেখা গেল সূর্য না পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরে, যার পরিণতি হিসেবে পৃথিবী থাকলনা আর মহাবিশ্বের কেন্দ্র।আরও সময় গেল। গত শতাব্দীতেই আমরা দেখলাম বিজ্ঞানের দূর্বার এগিয়ে চলা। প্রথমে আমাদের জগত ছিল সূর্য কেন্দ্রিক, এরপর আমরা পেলাম আমাদের সৌরজগত, তখন এটাই ছিল আমাদের জন্যে অনেক বড়। কিছুদিন পর দেখা গেলো সূর্যের মত, না সূর্যের চেয়েও অনেক অনেক বড় নক্ষত্র ও আছে আমাদের আশেপাশে, বাড়ল আমাদের মহাবিশ্বের পরিধি। তারপর? না, এখানেই তো শেষ না! আমরা তো একটা গ্যালাক্সির মাঝে বাস করি যার নাম মিল্কিওয়ে, যার ব্যাস প্রায় একলক্ষ আলোকবর্ষ আর যেখানে আছে প্রায় ২০ হাজার কোটি নক্ষত্র, নিঃসন্দেহে অনেক বড়। না তাও হল না, দেখা গেল মিল্কিওয়ে একমাত্র গালাক্সি না,গ্যালাক্সির সংখ্যা এত বেশি তা আসলে গুনে শেষ করা সম্ভব না। তাহলে? আমাদের মহাবিশ্ব তো আসলে অনেক বড়! পরে হিসেব করে দেখা গেল আমাদের মহাবিশ্বের বয়স এখন প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর। এই বিশালত্ব আসলেই অপূর্ব কিন্তু কথা হল এখানেই কি শেষ সৃষ্টির এই বিস্তৃতি? মহাবিশ্বের সীমানার ওপারে কি আর কিছুই নেই? আর আমাদের সৃষ্টির আগেই বা কি ছিল? অতি আদিম এইসব প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে বের করার চেষ্টা করব আজ, আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে । 
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হল?- এ প্রশ্নের একটি সাধারণ উত্তর আমাদের সবারই জানা – বিগ ব্যাং নামের এক অভাবনীয় বিস্ফোরণ এর মাধ্যমে। এখান থেকেই শুরু করি, যেই অতি ক্ষুদ্র কণা থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি তাকে বলা হয় ইনফ্লাটন ( Inflaton )। ইনফ্লাটনের প্রাথমিক অবস্থা ছিল অনেক সুবিন্যস্ত আর এই কণা ধারণ করছিলো বিশাল পরিমাণ শক্তি। এখানে সবচেয়ে অবাক করে দেয়ার মত যে বিষয়টি তা হল এরুপ একটি কণিকা থেকে এরকম একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হবার সম্ভাব্যতা অনেক অনেক কম, প্রায় ১:১০^১০^১২৩ ! তাহলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে কেন আমাদের মহাবিশ্ব এতো সুন্দর ভাবে সাজানো আর যেই ইনফ্লাটন থেকে আমাদের সৃষ্টি সেটাই বা কিভাবে আসলো, কোত্থেকেই বা আসলো। মহাবিশ্বেরStandard Model (যেখানে বিগ ব্যাং এর কথা বলা হয়েছে) – এই প্রশ্নের উত্তর দেয় না আর এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। 
যাই হোক ইনফ্লাটনের ব্যাপারে আসি। যদি ইনফ্লাটনকে একটি কোয়ান্টাম কণিকা ধরে নেয়া হয় তাহলে বলা যায় অন্য সব কোয়ান্টাম কণার মত ইনফ্লাটনের ও নিজস্ব কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ( সহজ ভাবে বলতে গেলে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বলতে কোন নির্দিষ্ট বিন্দুতে খুব অল্প সময়ের জন্যে শক্তির পরিবর্তন কে বোঝায়। ) আছে যার প্রভাবে মহাবিশ্বের প্রথম সময়গুলোতে স্পেসটাইমের বড় রকমের পরিবর্তন ঘটে। আর প্রাথমিক পর্যায়ে ইনফ্লাটনের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এর মত অতিক্ষুদ্র ঘটনার নানা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয় আমাদের আজকের দেখা বস্তুজগত। ভাবতে অবাক লাগে ওই পর্যায়ে যদি এই ধারাবাহিকতায় সামান্য পরিবর্তন ও হতো তাহলে হয়ত পৃথিবীর কোনদিন জন্মই হতো না।
এবার CMB সম্পর্কে কিছু বলব। বিগ ব্যাং বিস্ফোরণের পর একটা বিশাল পরিমাণের বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে মহাবিশ্বে। মহাবিশ্বের ক্রম সম্প্রসারণের সাথে সাথে এই বিকিরণের তীব্রতাও ক্রমশঃ কমতে থাকে এবং এটা এখনও কমছে। একভাবে বলতে গেলে এই বিকিরণকে বলা যায় আমাদের আদিম মহাবিশ্বের ছবি। এই বিকিরণকেই বলা হয় CMB বা Cosmic Microwave Background। ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞানী আরনো পেঞ্জিয়াস এবং রবার্ট উইলসন সর্বপ্রথম CMB-র অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। CMB আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টির প্রথম কিছু মুহূর্তের তথ্য ধারণ করে বলে জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে তার গুরুত্ব অসীম। ইনফ্লাটনের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের কথা বলছিলাম উপরে। এই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের ফলে CMB ফোটনেরও ( প্রতিটি বিকিরণ মাত্রই ফোটন) তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে, এই ঘটনাকে বলা হয় CMB Anisotropies Spectrum ( এখানে Anisotropy বলতে বোঝানো হচ্ছে যে এই তাপমাত্রার পরিবর্তন দিকনির্ভরশীল ছিল, অর্থাৎ বিভিন্ন দিকে এই তাপমাত্রার পরিবর্তন সমান ছিল না।) এখন মজার ব্যাপার হল Standard Model অনুযায়ী এই ধরণের পরিবর্তন হওয়ার কথা না। এটাকে আর একটু সহজ ভাবে বলি, ইনফ্লাটনের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন তখনই সম্ভব যখন ইনফ্লাটনকে আমরা কোয়ান্টাম কণিকা হিসেবে ধরব, Standard Model মহাবিশ্বের এই প্রাথমিক অবস্থাকে কোয়ান্টাম কণা হিসেবে বিবেচনা করে না। এখন দেখার ব্যাপারটি হচ্ছে Standard Model মহাবিশ্বে তাপমাত্রা আর বস্তুকণার পরিমাণের মধ্যে একটা প্রতিসাম্যের কথা বলে কিন্তু সেই প্রতিসাম্য মহাবিশ্বে অনুপস্থিত। এর একটা পার্শ্বিক কারণ হিসেবে CMB Anisotropies Spectrum কে দায়ী করা হয়, যদিও এটা একটা গাণিতিক অনুমান, সত্যি ধরে নেয়া হলে বলা যায় হয়ত ইনফ্লাটন কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসরণ করেছে।
আজ থেকে আরও প্রায় ৫০ বছর আগে হিউ এভেরেট নামের একজন ভদ্রলোক তার পি.এইচডির থিসিস এর গবেষণায় সর্বপ্রথম মহাবিশ্বের শৈশবের সময়টাকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আওতায় এনে কিছু হিসেব নিকেশ করেন। তিনি ভাবতেন যে শিশু অবস্থায় আমাদের মহাবিশ্ব যেহেতু অনেক ক্ষুদ্র ছিল তাহলে এই ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রয়োগ করতে কোন বাধা নেই। এই ভাবনা থেকে তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা তত্ত্ব ব্যবহার করে তিনি প্রাথমিক মহাবিশ্বকে একটি ওয়েভ প্যাকেট ( কোন তরঙ্গগুচ্ছ যা এককভাবে ভ্রমণ করে) এর সাথে তুলনা করেন। কিন্তু এই তুলনা থেকে একটা অদ্ভুত ফলাফল পাওয়া যায় । তিনি এই অবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ওয়েভ প্যাকেটের অনেকগুলো গাণিতিক সমাধান আবিষ্কার করে ফেলেন, যেই আবিষ্কারের অর্থ ছিল একটাই আর তা হল কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে আমাদের মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব এ কথাটা হয়ত ঠিক না ! কিন্তু এই অন্য মহাবিশ্বগুলো মানুষের পর্যবেক্ষণের সীমার বাইরে ছিল বলে তার এই আবিষ্কার নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা এভেরেটের জন্যে সত্যি কঠিন ছিল, তবু তিনি এই ধারণা নিয়ে অনেক সংগ্রাম করেন। তিনি তার গবেষণায় দেখান যে পদার্থবিজ্ঞানের এমন কোন বৈশিষ্ট্য বা শর্ত নেই যা এই বহুবিশ্ব তত্ত্বকে পুরোপুরি নাকচ করে দেয়। ফলাফলসরূপ তিনি এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছান যে একাধিক মহাবিশ্বের উপস্থিতি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রাকৃতিক ফলাফল। তার এই যুক্তিগুলো এতোটাই আকর্ষণীয় ছিল যে তা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম জনক নিলস বোরের দৃষ্টিও আকর্ষণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে এই তত্ত্বকে সমর্থন করার মত অন্য কোন তত্ত্বের অনুপস্থিতি আর এই ব্যাপারে এভেরেট নিজে গবেষণা থেকে সরে আসায় বহুবিশ্ব তত্ত্ব ধীরে ধীরে সবার আড়ালে চলে যায়। 

এভেরেটের এই তত্ত্ব প্রকাশের পর প্রায় ৪০ বছর এই ব্যাপারে উল্লেখ করার মত কোন গবেষণা হয়নি। এক দশক আগে স্ট্রিং তত্ত্বের মাধ্যমে বহুবিশ্ব তত্ত্বের পুনর্জাগরণ ঘটে। এই তত্ত্ব কে এখন বলা হচ্ছে Theory of Nature হবার জন্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রার্থী। এখন আসা যাক কিভাবে স্ট্রিং তত্ত্ব বহুবিশ্বের অস্তিত্বকে সমর্থন করছে। স্ট্রিং তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বে মাত্রা ( Dimension ) আছে ১১ টি, আর এটাই তত্ত্বটির অস্তিত্বের প্রতি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এটার কারণ আমাদের জানা- জগতে আমরা মাত্র ৪ টি মাত্রার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি- দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়। তাহলে যে তত্ত্বের মাত্রা আমাদের দেখা জগতের সাথেই খাপ খায়না তা কিভাবে Theory of Nature তথা Theory of Everything হতে পারে? স্ট্রিং তত্ত্ব অনুসারে এই অতিরিক্ত ৭ টি মাত্রা প্রথমত অনেক ক্ষুদ্র স্কেলে কাজ করে আর এরা এমনভাবে বক্রতা সৃষ্টি(Curling) করে যার কারণে তাদের অস্তিত্ব আমাদের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়( কঠিন করে ফেললাম? সবাই হয়ত ৩ মাত্রার একটি পাইপ দেখেছেন। অনেক দূর থেকে দেখলে একে কি ৩ মাত্রার মনে হয় ? তখন একে মনে হয় এক মাত্রার একটা তারের মত, মাত্রা অদৃশ্য করার ব্যাপারটি অনেকটা এরকমই) 
এখন কথা হল স্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী এই বাঁকিয়ে ফেলা আর সেই অতিরিক্ত ৭ মাত্রার শক্তিকে অবশিষ্ট চার মাত্রায় আনার কাজটি অনেক ভাবেই করা সম্ভব। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই গণিতবিদরা এই সম্ভাব্যতা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন, আর এ গবেষণা শেষে দেখা গেল নিঃসন্দেহে আমাদের চার মাত্রার এই জগতের সূচনা হওয়ার অনেক সম্ভাব্য উপায় রয়েছে । এই সম্ভাব্য পদ্ধতিগুলোর নিজস্ব শক্তির রূপরেখা স্ট্রিং তত্ত্বের গবেষকদেরই রীতিমত চমকে দেয়। তারা দেখেন এই পদ্ধতির প্রত্যেকটিতেই বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব। এভাবে স্ট্রিং তত্ত্বেও বহুবিশ্ব ধারণাটির জন্ম হয়। কিন্তু এভেরেটের মতই এখানেও বহুবিশ্ব নিয়ে প্রশ্ন ছিল কিন্তু ছিল না কোন পর্যবেক্ষণলব্ধ প্রমাণ। কারণ আগেই বলছিলাম , এ সবই মডেলের গাণিতিক প্রকাশে প্রমাণিত সত্য, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত বহুবিশ্ব তত্ত্বটিকে কোন পরীক্ষার দাঁড়িপাল্লায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না ততক্ষণ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কাছাকাছি কোন নিশ্চয়তাও দেয়া যাচ্ছিল না। আর এখানে আরও একটি প্রশ্ন ছিল-যদি ইনফ্লাটন থেকে অনেক মহাবিশ্ব সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকেই থাকে তাহলে কোন বিশেষ কারণে আমাদের মহাবিশ্ব এই সম্ভাব্যতায় টিকে গেলো? 

এমতাবস্থায় ২০০৫ সালের দিকে একদল বিজ্ঞানী এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন তাত্ত্বিক ভাষায়। তাদের মতে যদি আমাদের মহাবিশ্ব কেন টিকে গেলো তার উত্তর বের করতে হয় প্রথমে আমাদের মেনে নিতে হবে যে প্রাথমিক ভাবে আমাদের মহাবিশ্বের মত আরও শিশু মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ছিল, তারপরই আমরা বের করতে পারব কেন আমাদের মহাবিশ্ব আমাদের জন্যে নির্বাচিত হল আর বাকি মহাবিশ্ব গুলোরই বা কি হল। এরপর তারা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে ঘটনাটির একটি ল্যান্ডস্কেপ (একটি গঠন যা শিশু মহাবিশ্বগুলোকে ধারণ করে) কল্পনা করেন যেখানে শিশু অবস্থায় আমাদের সাথে সাথে আরও অনেক মহাবিশ্ব বিদ্যমান,এই ল্যান্ডস্কেপে শিশু মহাবিশ্ব গুলোকে তারা বিবেচনা করলেন এক একটি ওয়েভ প্যাকেট এর মত কণা হিসেবে। এখন প্রশ্ন হল মহাবিশ্বগুলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে ( এই প্রকল্পে সব কিছুই কোয়ান্টাম সীমার মধ্যে হচ্ছে বলে ধরে নেয়া হয়েছে) কিভাবে বিবর্তিত হবে? আপাতত মহাবিশ্বগুলো এই অবস্থাতেই থাক, এর মাঝে আমরা আমাদের চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা দেখে আসি।
ঘটনাটি হল কোন মাধ্যমে ইলেকট্রনের সঞ্চালন । কোন অন্তরক পদার্থ (যেমনঃ কাচ) কিংবা কোন ত্রুটিপূর্ণ তার- আণবিক দিক থেকে এই গঠনগুলোর বিভিন্ন বিন্দুতে শক্তির মাত্রা, পরিমাণ ও বণ্টনের কোন নির্দিষ্ট রূপরেখা নেই, এই বণ্টন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল, কোন কোন বিন্দুতে শক্তির পরিমাণ অনেক বেশি, কোথাও অনেক কম। ধরে নিলাম আমাদের একটি পরীক্ষায় ইলেকট্রন সঞ্চালনের মাধ্যম হিসেবে কাচ নেয়া হল।আমরা জানি এই কাচের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হবে না, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে তা হল ইলেকট্রনগুলো কাচের এই বিশৃঙ্খলভাবে বন্টিত শক্তির কারণে বিভিন্ন বিন্দুতে আটকে যায়। ফলে কাচের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন আর সঞ্চালিত হতে পারে না। সেই বিজ্ঞানীদের কল্পনার ল্যান্ডস্কেপে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছুটে চলা শিশু মহাবিশ্বগুলোর সাথে এই ইলেকট্রনগুলোর আর ল্যান্ডস্কেপটিকে তুলনা করা যায় এই কাচ মাধ্যমের সাথে। শিশু মহাবিশ্ব ধারণ করা ল্যান্ডস্কেপটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি ধারণ করে আর এই শক্তির বিন্যাস বিভিন্ন বিন্দুতে কাচের আনবিক ক্ষেত্রে শক্তির বিন্যাসের মতই বিশৃঙ্খল। এখন কথা হল এই ল্যান্ডস্কেপটির শক্তির বিন্যাস যদি সুসজ্জিত সুশৃঙ্খল হত, তাহলে কি সমস্যা হত তথা এই বিশৃঙ্খল শক্তি বিন্যাসের ল্যান্ডস্কেপ কেন কল্পনা করা হল। আবার ইলেকট্রনের জায়গায় ফিরে আসি। এখন আমরা একটা পরিবাহী মাধ্যমের কথা চিন্তা করি, আণবিক ক্ষেত্রে পরিবাহীর বিভিন্ন বিন্দুতে শক্তি খুব সুশৃঙ্খল ভাবে বন্টিত। আর এই কারণে ইলেকট্রন তেমন উল্লেখযোগ্য কোন বাধা ছাড়াই পরিবাহীর মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয়। একই ভাবে ল্যান্ডস্কেপটি যদি সর্বনিম্ন শক্তিধারী ( কোন বিন্দুতে সর্বনিম্ন শক্তি তার স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে) বিন্দু দ্বারা সুসজ্জিত হত তাহলে এই শিশু মহাবিশ্ব গুলো অনন্তকাল ধরে এই ল্যান্ডস্কেপে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরতে থাকত। তাহলে কোন মহাবিশ্বই কখনো সৃষ্টি হত না। এখন আমরা যেটা জানি তা হল আমাদের মহাবিশ্বের প্রাথমিক শক্তির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি প্রায় ১০^২৫ ইলেকট্রন ভোল্ট। এর মানে এটাই যে ল্যান্ডস্কেপের যে বিন্দু থেকে আমাদের মহাবিশ্বের যাত্রা, সেটি উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ছিল। কিন্তু এখানে আর একটা প্রশ্ন থেকে যায়, কেন আমাদের মহাবিশ্ব কম শক্তির স্থিতিশীল কোন বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করল না? এর সম্ভাব্য উত্তর একটিই হতে পারে আর তা হল সেক্ষেত্রে হয়তো বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে এই শিশু মহাবিশ্ব আমাদের আজকের বিশাল মহাবিশ্বে পরিণত হতে পারত না। 
উপরের ঘটনাগুলো একটা গল্পের মত লাগতে পারে, কিন্তু এটা কোন হাইপোথিসিস না, এর সম্পূর্ণটাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন সমীকরণ ব্যবহার করে পাওয়া। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা এখানে যে এই ব্যাখা গত শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত দুটি বিষয়- কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর স্ট্রিং তত্ত্বকে একটি বহুবিশ্ব তত্ত্বে একীভূত করে দেয়। কিন্তু সবকিছু হয়েও যেন কিছুই হয়না, এখন পর্যন্ত যা বললাম সবই ছিল তত্ত্ব আর গণিত। কিন্তু কিভাবে একে পরীক্ষা করা যায়? কিভাবে আমরা খুঁজে পাব আমাদের প্রতিবেশী এসব মহাবিশ্বকে? 
এই প্রশ্ন গবেষকদেরও ভাবিয়েছে অনেকদিন ধরেই। সবশেষে তারা এটারও একটা সমাধান বের করলেন। বিগব্যাং এর শুরুর দিকে শিশু মহাবিশ্ব গুলো একসাথে ছিল, সময়ের সাথে আমাদের মহাবিশ্বের পরিধি বাড়তে থাকলে একটা সময় এসে ডিকোহেরেন্স ( Decoherence) নামের একটা প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায় চিরদিনের জন্যে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে Unitarity Principle বলতে একটা নীতি আছে যেটা বলে কোন সিস্টেমের তথ্য কখনো হারিয়ে যায় না। আর এই নীতি অনুসারে মহাবিশ্বগুলোর পরস্পর যুক্ত থাকার কোন না কোন নিদর্শন আমাদের মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও থাকা উচিত। LAURA MERSINI–HOUGHTON, Tomo Takahashi, Richard Holman- নামের তিনজন বিজ্ঞানী ২০০৬ সালে Avatar’s of the Landscape –এই শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এখানে মহাবিশ্বের এই যুক্ত থাকার নিদর্শন গুলো কি রকম হতে পারে সে ব্যাপারে গাণিতিক হিসেবের মাধ্যমে কিছু ধারণা প্রকাশ করা হয়। এই ধারণাগুলোর মধ্যে ছিল মহাবিশ্বগুলো একসাথে থাকার কারণে CMB-র যে ক্ষমতা থাকার কথা তা না থাকা, আমাদের মহাবিশ্বে পদার্থের বণ্টনের মধ্যে কিছুটা অসামঞ্জস্য তথা Cold spot বা Giant Void এর উপস্থিতি,CMB-র বর্ণালি সূচকের( Spectral Index) মান দূরত্বের সাথে পরিবর্তন ( Standard Model অনুসারে যার মান ধ্রুবক হবার কথা ) ইত্যাদি ( Avatar’s of the Landscape এ এরকম নয়টি নিদর্শনের কথা বলা হয়েছিল)।

আপনারা নিশ্চয় Planck এর নাম শুনেছেন, না বিজ্ঞানী প্লাঙ্ক এর কথা বলছিনা , এটি একটি কৃত্রিম উপগ্রহ যা ২০০৯ সালে CMB –র ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণার জন্যে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। ২০১৩ সালের মার্চে তার মিশনের চার বছরের মাথায় Planck CMB-র এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বিস্তারিত মানচিত্র প্রকাশ করে। এই মানচিত্রের তথ্যে Avatar’s of the Landscape-এর তিন গবেষক অনেক উচ্ছ্বসিত। ধারণা করে দেখুন কেন ? না অপেক্ষায় রাখব না, Avatar’s of the Landscape –এর বেশিরভাগ নিদর্শনের অনুমান ছিল CMB ভিত্তিক, আর Planck এখন পর্যন্ত যে তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে তা এই নয়টি অনুমানের মধ্যে ৭ টির সাথে মিলে যায়। এটা এই গবেষকদের জন্যে সত্যি একটা বড় অর্জন, এছাড়া আর ও যে অনুমানগুলো করা হয়েছিল তার মধ্যে একটি ছাড়া (Dark flow prediction: এই অনুমান অনুসারে অন্য মহাবিশ্বের সাথে যুক্ত থাকার কারণে আমাদের মহাবিশ্বের মহাকর্ষীয় বিভবের একদিকে কাত হয়ে যাওয়ার কথা, যার কারণে মহাবিশ্বের কাঠামোগুলো একটি নির্দিষ্ট দিকে সমান বেগ বজায় রেখে প্রবাহিত হবে বলে ধারণা করা হয়, এই প্রবাহকে Dark flow বলা হয়, কিন্তু এই অনুমানটি এখনও নিশ্চিত করা যায় নি।) বাকি অন্যটির সত্যতা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে LHC-তে এবং সব ফলাফলই নির্দেশ করছে হয়তো আমাদের মহাবিশ্ব একা নয়। যদিও এখনও আরও অনেক হিসেব নিকেশ বাকি,অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি, অনেক তত্ত্বই এরকম প্রাথমিক পরীক্ষায় টিকে গেলেও পরে প্রশ্নের মুখে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আর এখনও একটি অনুমান যেহেতু প্রমাণ করার মত পরীক্ষা করা যায়নি,আমাদের প্রতিবেশীদের ( যদি সত্যি তারা থেকে থাকে) সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছু দিন। 
ধরে নিলাম একদিন এটা সত্যি নিশ্চিত হওয়া গেলো, তারপর? সেদিন থেকে আমরা জানব সৃষ্টির বিস্তৃতি আমাদের মহাবিশ্বেই শেষ নয়। একই সাথে এটাই হবে স্ট্রিং তত্ত্বের প্রথম পরীক্ষিত প্রমাণ। আর এরপর থেকে শুরু হবে আরও অনেক প্রশ্ন আর সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার এক অবিরাম যাত্রা। একটা কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় এই আবিষ্কারের পর থেকে মানবসভ্যতার অনেক কিছুই বদলে যাবে। সেই বদলে যাওয়া দিনের অপেক্ষায় ...