আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০১৪

LHCডেকে আনবে কি পৃথিবীর ধ্বংস নাকি সমাধান::[পর্ব--১]

আমাদের চারপাশের এই অতিপরিচিত জগতে অনেক রহস্য আছে, আছে অনেক জটিল ধাঁধা। মানবজাতির একটা অংশ, সভ্যতার প্রত্যুষেই শপথ নিয়েছিল এই সব রহস্যের নিগড় ছিড়ে বেরিয়ে আসার। তারা শপথ নিয়েছিল রহস্য কে বুঝতে হলে যুক্তি দিয়ে বুঝতে হবে।
এরাই আমাদের আজকের বিজ্ঞানীদের পুর্বসূরী। বিভিন্ন যুগে তারা নিজেদের জীবন বাঁজি রেখেছেন---না অর্থ প্রাপ্তির কথা মনে রেখে নয়। নিছক কৌতুহল মেটানোর জন্যে আর পরে যুক্তির মশাল ধরে রাখতে অনেকে প্রান পর্যন্ত দিয়েছেন।
আজ আমরা অ-নে-ক দূর এগিয়ে এসেছি। প্রযুক্তি আমাদের নিত্য সহায়। আমাদের অনেকে প্রেমিকা ছাড়া বাঁচতে পারি কিন্তু, ইন্টারনেট/পিসি/মোবাইল ফোন ছাড়া নয়। In fact অনেকে এই সবের সহায়তায়ই সম্পর্ক ছেদ করেন 

আমরা আজ অনেক কিছু জানি। প্রকৃতির নেকাব তুলতে তুলতে আমরা এখন এসে দাড়িয়েছি শেষ নেকাবের কাছে।
আমাদের বর্তমান সময়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে যে ক'টি চ্যালেঞ্জিং সমস্যা আছে তাদের মাঝে বিগ-ব্যাং এর শুরুর মুহুর্তে আসলে কি ঘটেছিল আর পদার্থের একেবারে গহীনতম প্রদেশে কি ঘটছে---এই দুটোই সর্বাগ্রেগন্য। এবং আমরা এখন এটাও জেনেছি যে, এরা আসলে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত----একটি জানলে, জানালা খুলে যাবে আরেকটির।
প্রথমে আমরা পদার্থের গহীনতম প্রদেশে বলতে কি বুঝায় বা সেইটা আসলে কি ---সে নিয়ে খানিক বাৎচিত করে নেব।
আমরা প্রায় সকলেই জানি---আমাদের চারপাশে যা আছে, সেগুলো আসলে অনেক ছোট ছোট কণিকা দিয়ে তৈরী। এইটা আসলে অনেক পুরোনো ধারনা।
ডেমোক্রীটাসের সময় থেকে এইটা জানা ছিল যে---কোন কিছু আমরা যদি ভাঙ্গতে থাকি, তাহলে একটা সময়ের পর সেইটা আর ভাঙ্গা সম্ভব নয়। পদার্থের সেই ক্ষুদ্রতম 'অবিভাজ্য' অংশটি কে ডেমোক্রিটাস Atom নাম দিয়েছিলেন (গ্রীক ভাষায় Atom শব্দের মানে হল 'এমন কিছু যেটা আর ভাঙ্গা/কাটা সম্ভব নয়)। তারপর কেটে গেছে বহুকাল।
এখন আমরা জানি---যে এটম আর অবিভাজ্য কোন সত্ত্বা নয়। একেও ভাঙ্গা যায়। শুধু তাই নয় এটম ভেঙ্গে তার ভেতরে কি আছে, সেইটাও আমরা 'মোটামুটি' ভাবে জানি।
রাদারফোর্ড নামের এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর গবেষনার পরে আমরা জানতে পারি পদার্থের এই ক্ষুদ্রতম অংশ (অর্থাৎ এটম) আসলে আরো ছোট ছোট কিছু কণিকা দিয়ে তৈরি। আর এটমের একেবারে বুকের মাঝে আছে আরেকটা প্রায় 'অবিভাজ্য' অংশ----যেটাকে নিউক্লিয়াস বলা হয়। একটা এটম বা পরমানুর প্রায় সমস্ত ভর ঐ কেন্দ্রিকা বা নিউক্লিয়াসে সন্নিবেশিত। সেই কেন্দ্র কে ঘিরে ঘুরছে অনেক ছোট ছোট ব্যস্ত-সমস্ত কণা। এদের কে ইলেক্ট্রন বলে আমরা ডাকি। ইলেক্ট্রনের রয়েছে বৈদ্যুতিক গুনাবলী। তার 'আধান' বা charge রয়েছে যেটা সর্ব সম্মতি ক্রমে ধরে নেয়া হয়েছে 'ঋণাত্মক' বা Negative। এককথায় আপনি এটম কে আমাদের সৌরজগতের এক ক্ষুদ্র মডেল ভেবে নিতে পারেন। এখানে সুর্য হল নিউক্লিয়াস, আর তাকে ঘিরে ঘুরতে থাকা গ্রহ গুলো হল ইলেক্ট্রন।এটম আসলে কত ছোট সেটা বোঝানোর জন্য এই তুলনাটুকু বেশ কার্যকর----- পানির এক ছোট্ট ফোঁটার মাঝে আছে ২x ১০^২১ টি oxygen অনু (১ এর পেছনে ২১টি শুন্য বসালে যা হয়) আর তার প্রায় দ্বিগুন সংখ্যক Hydrogen। আর এটম এত্ত ছোট বলে সেইটা একেবারে ইলেক্ট্রন আর নিউক্লিয়াসে ঠাসাঠাসি করে আছে এমন ভাবার কোন কারন নেই। প্রচুর ফাঁকা জায়গা এদের মাঝে আছে-----এটম কে যদি আপনি একটা ফুটবল খেলার মাঠ ধরে নেন তাহলে সেই মাঠের ঠিক মাঝখানে আপনি যদি একটা মটরশুটির একটা বীজ রেখে দেন তাহলে সেইটা হবে এটম আর নিউক্লিয়াসের তুলনামুলক আকৃতির পরিমাপ।
বিজ্ঞানীদের আরো অনেক দোষের মাঝে একটা হল----তারা থামতে জানেন না। এটমের মাঝে পাওয়া গেল ইলেক্ট্রন আর কেন্দ্রস্থলে নিউক্লিয়াস। কিছুদিন পর বিজ্ঞানীরা খবর দিলেন--নিউক্লিয়াসের মাঝে নাকি কিছু কণা পাওয়া যাচ্ছে। এখানে মোটামুটি দুই প্রজাতির কণা পাওয়া গেল----নিউট্রন, যার কোন চার্জ
নেই, আর প্রটোন যার চার্জ আছে এবং সেটা ধনাত্মক।
এখানেই ঘটনা থেমে থাকলে ভাল হতো----কিন্তু বিজ্ঞানীরা আবার থামতে জানেন না। কাজেই আরো কয়েক বছর পর দেখা গেল ইল্কেট্রন-প্রোটোন-নিউট্রন পদার্থের শেষ কথা নয়। এরা প্রত্যেকে আবার আরো ছোট ছোট কণা দিয়ে তৈরী যাদের নাম হল Quark।
বিজ্ঞানীরা যখন এইভাবে বার বার প্রকৃতিকে বলছিলেন,'উতারো নেকাব'-----তারা ক্রমশ আবিষ্কার করছিলেন যে দিন কে দিন এই অবগুন্ঠন উন্মোচন কঠিন হয়ে পড়েছে।
কেন?
আমরা যেহেতু জেনে গেছি--এটম কত্ত ছোট্ট একটা জিনিস, কাজেই সেইটা ভাঙ্গতে হলে আমাদের যে 'হাতুড়ি' দরকার সেইটাও ঐরকম ছোট হওয়া দরকার। তেমন ছোট 'হাতুড়ি' যেহেতু পাওয়া যায় না--সেহেতু তাদের নতুন কিছু 'উপায়' খুঁজতে হল। হঠাৎ করেই তাদের মাথায় এল----আরে এ আর কি কঠিন??!! এটম যেমন ছোট, তেমনি ইলেক্ট্রন-প্রোটন ও ছোট।
কাজেই এটম কে খোঁচাতে হলে ঐরকম ছোট দাঁত-খড়কে ব্যবহার করাই বুদ্ধি মানের কাজ হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। তারা একদল ইলেক্ট্রন কে ধরে বেঁধে তাক করলেন এটমের দিকে। তারপর শুরু হল টিপু সুলতানের 'তোপ' চালানো। রাশি রাশি ইলেক্ট্রন ঝাপিয়ে পড়ল যুদ্ধে। বার বার তারা আঘাত হানতে লাগল এটমের দিকে। বিজ্ঞানীরা আবার করেছেন কি, জানেন? তারা এমন ব্যাবস্থা করেছেন যে, এটমের সাথে 'ফাইট' দিয়ে ইলেক্ট্রন গুলো ঠিক কি ভাবে ঠিকরে পড়ে সেইটা মাপছেন।
<p>অনেকটা এই রকম করে ভাবুন----অন্ধকার ঘরে আপনি ঘাপটি মেরে আছেন আপনার ছোট ভাইকে ভয় দেখাবেন বলে। দেখা গেল সে আরেক কাঠি সরেস(আপনারই তো ভাই)। সে টর্চ নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। ঢুকেই সেইটা এদিক-ওদিক ঘোরাতে ঘোরাতে আপনার উপর ফেলেছে। এখন আপনি তো বেকায়দায়। এই অপ্রস্তুত অবস্থা থেকে চোখ ফিরিয়ে আপনি যদি  আপনার পেছনে ঘরের দেয়ালের দিকে তাকান---দেখবেন অবিকল আপনার এক অবয়ব ধরা পড়েছে। আপনার ছায়া পড়েছে দেয়ালে।
<p>বিজ্ঞানীরা ঠিক এই কায়দাটাই ব্যবহার করেন---খালি টর্চের বদলে ব্যবহার করেন Particle Accelerator নামের যন্ত্র যার কাজই হলো টর্চের আলোর মত ইল্কেট্রন বা প্রোটনের বন্যা বইয়ে দেয়া। আর এর পর তাক করা কোন এটমের দিকে আর দেখা তার কি 'ছায়া' পড়ে। ছায়া দেখে কায়া চেনা!