আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০১৪

সময় পরিভ্রমন করা কি আদৌ সম্ভব !!?




সময় পরিভ্রমণ কি সম্ভব? সায়েন্স ফিকশনগুলোতে সময় পরিভ্রমণ করে অতীত বা ভবিষৎতে যাওয়া-আসা দেখানো হয়। সুতরাং খুব বাড়াবাড়ি রকম সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত ছাড়া সবাই বলবে যে, না, সময় পরিভ্রমণ সম্ভব নয়। তবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু একধরণের সময় পরিভ্রমণের কথা স্বীকার করে। আইনস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটি থেকে আমরা জানি, কোন নভোচারী যদি দূরবর্তী কোন গ্রহ বা নক্ষত্রে আলোর কাছাকাছি কোন বেগে ভ্রমণ করে তাহলে সে একশো বছরের ভবিষ্যতেও যেতে পারবে। কারণ এই প্রক্রিয়ায় তার মাত্র কয়েক বছর ব্যয় হবে। সুতরাং না হয় ধরেই নেয়া হলো যে, ভবিষ্যৎ সময়ে এভাবে পাড়ি দেয়া সম্ভব, কিন্তু অতীতে? , যা আপাতত দৃষ্টিতে অসম্ভব। ধরুন, আপনার জন্ম ১৯৬০ সালে। এখন যদি আপনি সময় পরিভ্রমণ করে ১৯০০ সালে যেতে চান সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে? কারণ, সেই সময় তো আপনি জন্মগ্রহণই করেননি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেয়া হয় যে, আপনি সময় পরিভ্রমণ করে আপনার শৈশবে ফিরে গেছেন, তবুও এটা ধরে নেয়া অবশ্যই যুক্তিযুক্ত হবে না যে, সময় পরিভ্রমণ করে আপনার জন্মের আগের সময়েও আপনি যেতে পারবেন।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোতে এ ধরণের ঘটনা দেখানো হয়
এ ধরণের প্যারাডক্স এড়ানোর জন্য দুটি বিকল্প কথা চিন্তা করা যায়। একধরণের সামাধানে বলা হয় যে, অতীত সময় পরিভ্রমণকারীরা নতুন একধরণের টাইমলাইন সৃষ্টি করবে। যেটা প্রকৃত ঘটনা, যেটা ঘটেছে সেটার সমান্তরাল কিন্তু স্বাত্বন্ত্র্যপূর্ণ হবে।
যেমন ধরে নেয়া হলো, টাইম মেশিনের আবিস্কারক অতীত সময় পরিভ্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির গুপ্তহত্যা প্রতিরোধ করতে চাইল। সে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে কোন একদিন টাইম মেশিনে রওনা হলো এবং ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর (কেনেডির মৃত্যুদিন) সকালের ডালাসে পৌছাল, সকালের সংবাদপত্র সেদিনকার তারিখ নিশ্চিত করছে। শহরের সবাই কেনেডিকে উঞ্চ অভিনন্দন দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে এরকম অনেক কিছু। কিন্তু প্যারাডক্সের সমাধান মতে এটা অরিজিনাল ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর নয়, যেদিনের ইতিহাস বইয়ে আছে অথবা প্রবীনদের মস্তিষ্কে আছে। অরিজিনাল ২২শে নভেম্বর ১৯৬৩ সালে আমাদের ভ্রমণকারী যেখানে ছিল না, সে সেদিনকার সংবাদপত্রের কপিও কেনেডি অথবা কেনেডির হত্যাকারী অসওয়ার্ল্ডকে দেখে সন্দেহ করেনি। তার এই সকাল পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও ছিল না। তাহলে ভ্রমণকারী প্রকৃতপক্ষে ১৯৬৩ এর ২২শে নভেম্বর যায়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে কেনইবা দাবী করা হবে যে ঐ সময়ে গিয়েছিল। এটার সমাধান হলো আসলে সময় পরিভ্রমণকারী যেখানে যাবে সেটা একটা সমান্তরাল বিশ্ব, যেখানে পৃথিবীর  সমান্তরাল কিছু ঘটনাই অথবা ধরা যাক প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটেছে সেটাই ঘটেছে।
সময় পরিভ্রমণ প্যারাডক্স সমাধানের দ্বিতীয় পন্থায় ধরে নেয়া হয় যে, পরিভ্রমণকারী ঐ সময়ে পরিভ্রমণ করবে ঠিকই কিন্তু ঘটনার কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। অর্থাৎ ধরে নেয়া হলো যে, পরিভ্রমণকারী ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বরে পৌঁছল ঠিকই, সংবাদপত্র কিনে সেদিনের তারিখ দেখে নিশ্চিতও হলো, এমনকি কেনেডির গুপ্তহত্যা ঠেকাতে চেষ্টাও করল কিন্তু পারল না। অথবা অসওয়ার্ল্ডকে গুলি করা থেকে নিবৃত্তও করল কিন্তু ধরে নেয়া হলো যে, সেখানে আরো গানম্যান ছিল যাদের সে রুখতে পারল না। অর্থাৎ সময় পরিভ্রমণকারীরা অতীত সময়ে যেতে পারল ঠিকই কিন্তু প্রকৃত ঘটনা বা ইতিহাসের কোন পরিবর্তন করতে পারল না। এধরণের সময় পরিভ্রমণ যৌক্তিকভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা ফিজিকালী বা শারীরীকভাবে সম্ভব হবে। কারণ, হিসেব করে দেখা গেছে যে, একাজে যে পরিমাণ শক্তির দরকার হবে সেটা প্রকৃত অর্থেই অকল্পনীয় এবং প্রকৃতি সে পরিমাণ শক্তিকে সমর্থনও করে না।
আবার একটি যুক্তি দিয়ে অনেকে দেখিয়ে দেন যে, সময় পরিভ্রমণ বাস্তবে কখনও সম্ভব নয়। যদি ধরেই নেয়া হয় বর্তমান প্রযুক্তিগত অসুবিধার কারণে শারীরীকভাবে সময় পরিভ্রমণ করতে যে পরিমাণ শক্তি দরকার তা পাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু এটা তো অন্তত ধরে নেয়া যাবে যে ভবিষৎতে প্রযুক্তিগত আরো উৎকর্ষ সাধন হলে এ পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষরা সময় পরিভ্রমণ করতে পারবে। সুতরাং অবশ্যই তারা অতীত পৃথিবী ভ্রমণ করতে চাইবে। কিন্তু আমরা কি আমাদের মানব সভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এরকম কোন অতীত সময় পরিভ্রমণকারী দেখতে পাই? সুতরাং হাজার হাজার বছর পরের উন্নত প্রযুক্তির পৃথিবীর মানুষই যদি সময় পরিভ্রমণ করে আমাদের এ সময় বা আগেকার কোন সময়ে আসতে পারেনি, তাহলে কেনইবা আমরা সময় পরিভ্রমণের ব্যাখ্যা মেনে নেব? সুতরাং ওয়েলসের টাইম মেশিন নিয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ে সেগুলোকে আগামী দিনের ঘটনা মনে হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ কি মেনে নেয়া উচত হবে?

লেখাটা "সচলায়তন" থেকে নেয়া