আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৭, ২০১৪

ব্ল্যাক হোলের সাথে ম্যানহোলের এবং হোয়াইট হোলের সাথে সুড়ঙ্গমুখের মিল আছে- সত্যি কথা কিন্তু!




মগবাজারের দিলু রোড দিয়ে হাঁটছেন। সাথে এমন একজন আছেন যার সঙ্গে ইতোমধ্যেই আপনার মানসিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছেকিন্তু অধিকাংশ সময়ই আপনি বুঝতে পারেন না তার মেজাজ গরম না ঠাণ্ডা। এমন সময় আপনি হুশ্ শ্ করে ঢুকে গেলেন ম্যানহোলে। আপনি জানেনমানুষের শরীর থেকে নির্গত সবকিছু প্লাজমা অবস্থায় থাকে এই ম্যানহোলে। সেগুলোর স্পর্শ পেয়ে আপনার কিছুটা শীত শীত করতে লাগলো। বেরুনোর কোনো উপায়ও দেখছেন না। আপনার সঙ্গীকে যে বলবেন আপনাকে টেনে তুলতেসে উপায়ও নেই। প্রেস্টিজ তো আস্তে আস্তে পাংচার হবেইতার চাইতে বড় কথা আপনার কোনো শব্দই হয়তো সেখান থেকে বেরিয়ে বাকি দুনিয়ার কানে পৌঁছবে না। - এই অভিজ্ঞতা যদি কখনো আপনার হয়ে থাকেনতাহলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায় ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে আপনার প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা বিশেষজ্ঞপুরুষ হকিং-এর চাইতে অনেক বেশি।

ধরে নিলামউদ্ধার পাওয়ার আশায় আপনি হাঁটতে শুরু করলেন। হাঁটতে হাঁটতে একসময় হঠাৎ করে আবিষ্কার করলেন কী যেনো আপনাকে প্রবলবেগে টেনে নিয়ে যাচ্ছে! নিচে তাকিয়ে দেখলেনমনুষ্যনির্গত প্লাজমাগুলো হঠাৎ করেই প্রবলবেগে আপনাকেসহ ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে এমন এক জায়গায়যেখানে নিশ্চিত আপনার সঙ্গী আপনার জন্য অপেক্ষা করে বসে নেই এবং তার কিছুক্ষণ পরই আপনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন বেগুনবাড়ি খালের মুখে একটি ভূপাতিত বস্তুরূপে। অবাক হওয়ার কিছু নেইআপনি আসলে পানি নিষ্কাশন পাইপের মাধ্যমে প্লাজমামিশ্রিত অবস্থায় নিপাতিত হয়েছেন পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁর পাশের ওই খালে। এই যে আপনি হঠাৎ করেই পাইপের মুখ দেখতে পেলেন এবং (আস্তাকুঁড়ে) নিক্ষিপ্ত হলেন প্রবলবেগেসেই অভিজ্ঞতা নিয়েই পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের সাথে হোয়াইট হোল থেকে পদার্থ কীভাবে মহাশূন্যে নিক্ষিপ্ত হয়সে বিষয়ে তর্ক করতে পারেন। আপনি এটাও বলতে পারেনএই মহাশূন্যে ব্ল্যাক হোলের অবস্থান যেমন নিশ্চিতহোয়াইট হোলের অবস্থান তেমনই নিশ্চিত। কেবল অনিশ্চিত যিনি এই লেখাটি লিখছেনতার জ্ঞান সম্পর্কে।

*

নিউটনের সূত্র অনুযায়ীবিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুই একে অপরকে টানছে। কিন্তু ক্ল্যাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার চিরায়ত ধারণার সঙ্গে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু গোলমাল আছে। মস্তিষ্ককে আপাতঃধারণাশূন্য না করে একসঙ্গে ক্ল্যাসিক্যাল পদার্থবিদ্যা ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে পড়তে গেলে মস্তিষ্ক উল্টাপাল্টা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। সেটি নিয়ে অবশ্য পরেও আলাপ করা যাবে।

কথা বলছিলাম ব্ল্যাক হোল নিয়ে। সরলভাবে বলা যায়কোনো অতিকায় নক্ষত্র যখন অবিশ্বাস্যভাবে সংকুচিত হয়ে যায় এবং জমাট বেঁধে তার অভিকর্ষণ শক্তিকে বাড়িয়ে নেয় অকল্পনীয়ভাবে- তখন বিজ্ঞানীরা তাকে ব্ল্যাক হোল নামে ডাকেন। এর আকর্ষণ শক্তি এতোটাই মারাত্মক যেআলো পর্যন্ত একে ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে ব্ল্যাক হোলকে দেখা যায় না কখনোইতার রং হয় কালো কিন্তু বুঝা যায় যেসামথিং ইজ রং ইন দ্য গোলক। যেমনএক কেজি ওজনের কোনো বস্তু যদি ব্ল্যাক হোলের মাত্র বিশ ফুট দূরে এনে রাখা যায়তখন সেটির ওজন হয়ে যাবে কমপক্ষে দশ লাখ টন।

বলা হচ্ছে নক্ষত্র অবিশ্বাস্যভাবে সংকুচিত হয়ে ব্ল্যাক হোলের জন্ম দেয়। কিন্তু সেই অবিশ্বাস্যভাবে সংকুচিত হওয়ার মাত্রা কতটুকুউদাহরণস্বরূপসূর্যের ব্যাস প্রায় দেড় মিলিয়ন কিলোমিটার। এই বিশালাকার আয়তনকে যদি কোনোভাবে মাত্র দশ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা যায়তাহলে সেটি একটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। অন্যদিকেপৃথিবীকেই যদি চেপেচুপে মাত্র দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার বানানো যায়তাহলে পৃথিবীও একটি ক্ষুদে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতে পারে।

ব্ল্যাক হোলে যে সব জিনিস প্রবেশ করে- বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন- সেগুলো পাক খেতে খেতে প্রবেশ করার সময় ব্ল্যাক হোলের বিপুল অভিকর্ষ ক্ষেত্রের প্রভাবে প্রচণ্ড গতিশক্তি অর্জন করে। এই শক্তির আবার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিকিরণে রূপান্তরিত হয়কিন্তু হয়তো তাপ উৎপন্ন হয় না। ফলে ব্ল্যাক হোলের মাঝখানে একটি শীতল পরিবেশ বিরাজ করতে পারে। সাধারণত বস্তুর মধ্যে যতোটুকু শক্তি থাকেতার পুরোটাই নির্গত হয় এবং আমাদের কল্পসীমার বা ধারণারও বাইরে- এমন শক্তি নির্গত হয়। আমরা যখন চুলায় কাঠকাগজকয়লা কিংবা পাতা দিয়ে রান্না করিতখন সেগুলোর এক অংশ আলো ও তা উৎপন্ন করে এবং বাকি অংশ অব্যবহৃত রয়ে যায়। যে কারণে একই কয়লা দিয়ে কয়েকবার রান্না করা সম্ভব। এই বিরাট অংশ অব্যবহৃত হয়ে যাওয়ার কারণেই এসবের উপজাত হিসেবে চুলা থেকে ছাই বা কয়লা পাওয়া যায়। যদি বস্তুর পুরো অংশটিই শক্তিতে রূপান্তরিত হতোতাহলে সেগুলো পুড়ানোর পর আর কিছই অবশিষ্ট থাকতো না।

ব্ল্যাক হোল যেমন সবকিছুকেই ভেতরের দিকে টেনে নিচ্ছেস্বাভাবিক গাণিতিক নিয়মানুসারে এমন কিছু থাকার কথা যেগুলো সবকিছুকেই বাইরের দিকে উগরে দিচ্ছে। এই চিন্তাভাবনা থেকেই বিজ্ঞানীরা মনে করেনমহাশূন্যে ব্ল্যাক হোলের বিপরীতধর্মী হোয়াইট হোলের অস্তিত্ব বিরাজমান। তারা মনে করেনব্ল্যাক হোলে পজিটিভ গ্র্যাভিটির চাপে যতোটুকু সংকুচিত হয়ে বস্তু ভেতরে প্রবেশ করছেঠিক ততোটুকু নেগেটিভ গ্র্যাভিটির চাপে অন্য একটি দ্বার দিয়ে সেগুলো বেরিয়ে যাচ্ছেযাকে হোয়াইট হোল বলা যেতে পারে। এই সূত্রানুসারে অনেক বিজ্ঞানী রহস্যময় কোয়াসারগুলোকে হোয়াইট হোল বলে মনে করেন।

গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সের বদৌলতে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও হোয়াইট হোল নিয়ে বিজ্ঞানীদের চিন্তা কমছেই না। মহাশূন্যে বিশাল জায়গা নিয়ে শত শত গ্যালাক্সির ঔজ্জ্বল্য নিয়ে যে সব বস্তু ঘুরছেসেগুলোকে কোয়াসার বা হোয়াইট হোল নাম দিলেও তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্ল্যাক হোলের চারপাশে গ্র্যাভিটন দিয়ে তৈরি গ্র্যাভিটি যেমন আলোকে নিজের দিকে টেনে নেয়তেমনি কোনো প্রমাণ হোয়াইট হোলের সপক্ষে বিজ্ঞানীরা এখনও পান নি। ফলে বস্তুআলোরেডিও তরঙ্গ বা চুম্বকীয় তরঙ্গ যেমন বিলীন হয়ে যায়তেমনিভাবে সেটা যে ফিরে আসে সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো এখনো কোনো দৃঢ় প্রমাণ পান নি বিজ্ঞানীরা।

একটু আগেই বলা হয়েছেব্ল্যাক হোলের ভেতরের পরিবেশ হবে শীতল। কিন্তু সেখানেও বড়সড় বিভ্রান্তি আছে ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্স এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কারণে। ব্ল্যাক হোল যদি সূর্য কিংবা এরকম বড় সাইজের নক্ষত্রের থেকে উৎপত্তি হয় তাহলে তার অবস্থা হবে ভয়াবহতম শীতল। অন্যদিকে যদি সাইজ হয় প্রোটনের মতোতাহলে তার তাপমাত্রা এতোটাই বেশি হবে যেসেই তাপমাত্রা কথা চিন্তা করাও দূরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের সবচাইতে কাছের ব্ল্যাক হোল সিগনাস এক্স-১কে বলা হয় মহাশূন্যের শীতলতম জায়গা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছেব্ল্যাক হোল টিকে থাকে কয়দিনস্টিফেন হকিং মনে করেনছোট ছোট ব্ল্যাক হোলগুলোর আয়ু কমযেখানে বড়গুলো আমাদের সময়ের হিসেবে প্রায় অনন্তকাল টিকে থাকবে। তবে যদি এমন হয়নক্ষত্রগুলো আস্তে আস্তে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়ে গায়ে গায়ে লেগে যাচ্ছেতাহলে একসময় পুরো মহাশূন্যই ব্ল্যাক হোলময় হয়ে যাবে। এবং এখানেই মহাশূন্যের ইতিহাসের সমাপ্তি।

যারা হোয়াইট হোল তত্ত্বে বিশ্বাস করেনতারা কিন্তু মনে করেন এখানেই মহাশূন্যের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটবে না। কারণ বস্তুগুলো হোয়াইট হোলের মাধ্যেম বিচ্ছুরিত হয়ে অপরপ্রান্তে (যদিও মহাশূন্যের অপরপ্রান্ত বলে কিছু আছে কি-নাসেটি আরেক বিতর্কের ব্যাপার) গঠিত হবে নতুন নতুন নক্ষত্র। আবার সৃষ্টি হবে নতুন মহাশূন্যনতুন পৃথিবীনতুন প্রাণ।