আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

বুধবার, জুন ১৮, ২০১৪

রহস্যময় সংখ্যা শুন্যর রহস্যময় কীর্তি!!!

শূন্যতে আমাদের শুরু আবার শূন্যতেই আমরা বিলীন হব। হুমায়ূন আহমেদের এই কথা কতটুকু সত্য তা আমি জানি না। তাই দেখি সামিউল ভাই আমাদের কি বলেনঃ 

ছোটকাল থেকে পড়ে এসেছি জোড় সংখ্যা , বেজোড় সংখ্যা । এমন কি শুন্যস্থান পূরণও করেছি (যেমন ১, ৩, ৫, _ , ৯, _ ,১৩)। বল তো বাবু এখানে কী হবে? এত্ত সোজা? প্রথমে ৭ আর পরে ১১ হবে। এ তো গেল বেজোড় সংখ্যা। তারপর আসল জোড় সংখ্যা। সেগুলা হচ্ছে (২, ৪, ৬, ৮, ১০, ......) ইত্যাদি। ধীরে ধীরে বড় হবার পর হঠাৎ চিনে গেলাম ঋণাত্মক সংখ্যা, মানে মাইনাস ১ ( -১), মাইনাস দুই (-২) ইত্যাদি। এগুলা নাকি আবার ঋণাত্মক সংখ্যা। মাইনাস ২ কিন্তু আবার জোড়, মাইনাস ১ আবার বেজোড়। কিন্তু এসব কিছুর মাঝে মানে ঋণাত্মক আর ধনাত্মক এই দুই ভাইকে যে যুক্ত করে দিল মানে শুন্য, সে কি জোড় না বিজোড়? 

জোড় আর বিজোড় - এই দুই ধরনের সংখ্যাকে একটু আলাদা করে দেখি আসলে এরা কী রকম। জোড় সংখ্যাগুলোকে প্রকাশ করা হয় 2N হিসেবে। মানে দুই এবং তার গুণিতক। জোড় সংখ্যাগুলোর শেষ অঙ্ক হয় ২,৪,৬,৮,০। (এইকথাটা নিয়ে শেষে বলছি)। আবার বিজোড় সংখ্যাকে প্রকাশ করা হয় 2N minus 1 এবং শেষ হয় ১,৩,৫,৭,৯ অঙ্কগুলো দিয়ে।

এই প্রশ্নটা প্রথম শুনি গনিত উৎসবে। শুনে তেমন কিছু মনে হয় নি। কারণ সামনে থেকে স্যাররা যাই বলে ঐটা শুনে মনে হত, '' হুম , এইটাই তো হবে। এখানে এতো চিন্তার কী আছে? '' আবার আজকে গ্রুপে আমার বন্ধু পল পোস্ট দিলো শুন্য কি জোড় না বিজোড়? তখন শুরুর কিছু কমেন্টের সাথে গলাবাজি করে আমিও বললাম শুন্য জোড়। কিন্তু আমাদের স্যার যখন বলল শুন্য জোড়ও না বিজোড়ও না, তখনই আমার আপত্তিটা হল। জানতে ইচ্ছা করল আসলে ব্যাপারটা কী?

একসাথে নেট সার্চ দিলাম , আর একগাদা ভাইয়াকে জ্বালানো শুরু করলাম । কেউ বলল, ''জোড়''। আবার কেউ বলল,''এটা জোড় বেজোড় কিছুই না, এটা অঋণাত্মক'।' আর সবার শেষে সব চেয়ে মজার উত্তর দিল একজন, 'এইটা তো ভাই বিতর্কের বিষয়।'

এইবার শুন্য কেন জোড় এর পেছনে যুক্তিগুলো একটু দেখি ,

(১) একটি সংখ্যাকে জোড় বলা হয় যদি তা ২ এর গুণিতক হয়। শূন্য দুই এর একটি গুণিতক, অর্থাৎ ০ × ২, সুতরাং শূণ্য জোড়।
(২) আমরা জানি , জোড় ± জোড় = জোড় [ 2 plus (-2) = 0 ]
বিজোড় ± বিজোড় =জোড় [ 3 plus (-3) = 0 ]
জোড় × পূর্ণ সংখ্য = জোড়[ 36 x 0 = 0 ]
(৩) সংখ্যা রেখায় চিন্তা করা যাক এবার, ২,৪,৬,৮,১০ ...... এভাবে ২ ঘর পর পর যে সব সংখ্যা আছে সেগুলো জোড়। অন্যভাবে মাইনাসের ক্ষেত্রে -২ ,-৪,-৬,-৮ এগুলা সব মানে দুই ঘর পেছাতে থাকলে জোড় সংখ্যা পাওয়া যাবে। তাই ০ হল মাইনাস দুই (-২) আর প্লাস দুই(২) এর মাঝে। মাইনাস দুই এর দুই ঘর পর, আর ২ এর দুই ঘর পেছনে ০। এই দিক দিয়ে শুন্য জোড় । 

এটাকে অনেকে বলে জোড় , অনেকে বলে অঋণাত্মক ।

(৪) শুরুতে জোড় সংখ্যা কি সেটা বলতে গিয়ে বলেছিলাম জোড় সংখ্যা শেষ হয় ২,৪,৬,৮,০ অঙ্কগুলো দিয়ে। যেমন ১২, ২৪, ৩৬, ৪৮, ৬০ ইত্যাদি। আচ্ছা, তাহলে ২,৪,৬,৮ তো এমনিতেই জোড় তাই না? তাহলে ০ জোড় না হবার কোন কারণ থাকা উচিত না । বিজোড় সংখ্যার শেষ অঙ্ক কখনও ০ হয় না (বিজোড় সংখ্যার শেষ হয় ১,৩,৫,৭,৯) দিয়ে।

আর এই কঠিন যুক্তিগুলোকে তুচ্ছ করে আরও কিছু নতুন ব্যক্তিবর্গের কাছে পাওয়া গেল শুন্য জোড়ও না বেজোড় ও না । তাদের যুক্তি ,

(১) পূর্ণ সংখ্যা হচ্ছে ধনাত্মক , ঋণাত্মক এবং অঋণাত্মক । অঋণাত্মক , মানে শুন্য সংখ্যাটি ধনাত্মক আর ঋণাত্মককে মিলিয়ে দিয়েছে । তাই এটা জোড় বা বেজোড় কিছুই না । 
(২) আরও একটা সুন্দর যুক্তি দিয়েছেন একজন, সেটি হল জোড় সংখ্যা হল, 2N (এখানে N = 1,2,3,4,5,6,7,...) , তাহলে এখানে প্রথম জোড় সংখ্যা আসে 2, শুন্য আসে না । তাই না ? আবার বেজোড় সংখ্যার কথায় আসা যাক । বেজোড় সংখ্যা হল 2N ± 1 । তাহলে প্রথম বেজোড় সংখ্যা হল 1 । তাই তো ? কিন্তু এই যুক্তিতে তো ঋণাত্মক সংখ্যা গুলো বাদ পরে যাচ্ছে । এই ব্যাপারটা ঘোলাটে আমার কাছে ।আবার N ε N হলে ব্যাপারটা এক রকম , আবার N ε Z হলে তো ঋণাত্মকের সাথে আবার শুন্য এসে পড়ে। (৩) যারা শুন্যকে জোড় অথবা বেজোড় মনে করেন না তাদের কাছে সংখ্যা রেখায় শুন্য হল অঋণাত্মক । তাদের চোখে এইটা ঋণাত্মক আর ধনাত্মকের মাঝামাঝি । মানে এই যে , শুন্য কিছু না ।
(৪) শুন্যকে একটু আলাদা চোখে দেখে একটু বেশি আদর করে একজন গনিতবিদ তার বইয়ে লিখেছেন,
জোড় ± জোড় = জোড় (বা শূণ্য)
বিজোড় ± বিজোড় = জোড় (বা শূণ্য)
জোড় × অশূণ্য পূর্ণসংখ্যা = জোড় ।
(৫) আবার শূন্যকে ২ দ্বারা গুণ করলে ০ হয় ।এই যুক্তির বিপরীতে তাদের মত সব সংখ্যাকে ০ দিয়ে গুণ দিলে গুণফল শূন্যই হবে।কেননা সংখ্যারাজ্যে শূন্য একটি ব্যতিক্রম সংখ্যা ।
তাহলে আসলে শেষ পর্যন্ত কি দাঁড়াল ? আমার মতে শূন্য জোড় হওয়া উচিত(জোড় হবার ৪ নং যুক্তির বিপরীতে কোন মত পাচ্ছি না) । কিন্তু এই মতের বিপরীতে যারা তাদের মতে , শূন্য হল ব্যতিক্রম।


জিরো টু ইনফিনিটি