আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০১৪

ইন্টারনেটের এক রহসস্ময় জগত,যা অতি গোপন!!!

আমরা অনেকেই ভাবি অনেক কিছু জানি। কিন্তু আমরা আসলে কতটুকু জানি তার প্রমান মিলে কাজের সময়। তা যাইহোক, আসল কথায় আসি। আপনি কি মনে করেন,আপনি ইন্টারনেটের সব তথ্যই জানতে পারেন? আপনি যদি বলেন হ্যাঁ, আমি বলব না!! কেন তা নিচের লেখাটা পড়লেই বুঝবেন। 

ইন্টারনেট ব্যাবহার করছে অথচ গুগলের সাথে পরিচয় নেই এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেকে ইন্টারনেট কী এটা বুঝার আগেই পরিচিত হয়ে যান গুগল নামের সাথে। কোনো কিছু জানার দরকার হলে অন্যকে না জিজ্ঞাসা করে প্রায় সবাই সার্চ দেয় গুগলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো গুগল কতটুকু জানে? আপনি জেনে অবাক হবেন যে গুগল আপানার সামনে যে তথ্য হাজির করতে পারে তা সমগ্র ইন্টারনেট দুনিয়ার তথ্য ভান্ডারের মাত্র ১০ ভাগ। বাকি ৯০ ভাগ গুগলের ক্ষমতার বাইরে। আর সেই ৯০ ভাগ চিরকাল আপনার অজানাই থেকে যাবে যদি আপনি কেবলমাত্র গুগলের উপর নির্ভর করে থাকেন। একটি জরিপে দেখা গেছে দৃশ্যমান ওয়েবে যে পরিমাণ ডাটা সংরক্ষিত আছে তারচেয়ে ৫০০ গুণ বেশি পরিমাণ ডাটা সংরক্ষিত আছে অদৃশ্যওয়েবে। এই অদৃশ্য ওয়েবের নাম হল ডীপ ওয়েব। একে ডীপ নেট, দ্যা ইনভিজিবল ওয়েব, ডার্ক নেট, হিডেন ওয়েব, আন্ডার নেট ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।

সার্চ ইঞ্জিনের কাজ হলো ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোর পেইজগুলো ইনডেক্স করে রাখা যাতে পরবর্তীতে সেই পেইজগুলো খুঁজে বের করা সহজ হয়। আর এর জন্য যে প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয় সেটাকে বলে ক্রাউলার। ক্রাউলার ওয়েবসাইটের HTML ট্যাগ দেখে ওয়েবসাইটগুলোকে লিপিবদ্ধ করে। আর এই জন্যই গুগল এতো দ্রুত আমাদেরকে রেজাল্ট দিতে পারে। আর ইনডেক্স করে রাখার জন্য সেই ওয়েবসাইট এডমিনের অনুমতি দরকার হয়। কিন্তু সাইটের এডমিন পেইজ ইনডেক্স করার অনুমতি না দিলে গুগল সেটা খুঁজে বের করতে পারবে না। এটিই ডীপ ওয়েবের মূল ধারণা।

এই ডীপ ওয়েবের একটি অংশে নানাধরনের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ করা হয়। আর সেই অংশকে বলা হয় ডার্ক ওয়েব। সেখানে আপনি আপনার সাধারণ ব্রাউজার দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একধরনের বিশেষ নেটওয়ার্কের সাহায্য নিতে হবে।

ডার্ক ওয়েবের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এরা ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের (WWW) সাইটগুলোর মত টপ লেভেল ডোমেইন (যেমন .com, .net, .org) ব্যবহার না করে “Pseudo Top Level Domain” ব্যবহার করে যা মূল ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওর্য়াকের অধীনে থাকে। এ ধরনের ডোমেইনের ভেতর আছে Onion, Bitnet, Freenet আরও অনেক। এই ডোমেইনগুলোর নামগুলোও একটু ভিন্নধরনের, সাধারণ কোনো নামের মতো না। যেমন: http://hpuuigeld2cz2fd3.onion 

ডার্ক ওয়েবে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেটওর্য়াক হলো অনিয়ন নেটওর্য়াক। অনিয়নের Pseudo-top-level-domain হলো .onion। অনিয়ন ওয়ার্ল্ডে ঢুকতে হলে আপনাকে টর ব্রাউজার ব্যাবহার করতে হবে। টর আপনার পরিচয়কে লুকিয়ে ফেলবে আর এর ফলে কারো পক্ষে আপনার অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। আপনি যখন টর দিয়ে কোনো সাইটে ঢুকতে যাবেন তখন টর আপনার পাঠানো রিকোয়েস্ট কঠিন এনক্রিপশনের মধ্য দিয়ে অনিয়ন প্রক্সিতে পাঠাবে। অনিয়ন প্রক্সিতে আপনার পাঠানো ডেটা দুর্বোধ্য এক স্ক্রিপ্টে পরিণত হয়। এবার অনিয়ন প্রক্সি এই ডেটা নিয়ে মূল ইন্টারনেটমূখো হবে যেখানে অনেকগুলো অনিয়ন রাউটার অপেক্ষা করছে। অনিয়ন রাউটারে প্রবেশের আগে অনিয়ন নেটওয়ার্কের প্রবেশপথে এই ডেটা আবার এনক্রিপশন হবে। নেটওয়ার্ক থেকে বের হওয়ার সময় আরো একবার এনক্রিপশনের ভেতর দিয়ে যায়। এর মাঝেই অনিয়নের বেশ কিছু রাউটারের ভেতর দিয়ে এনক্রিপশন হয় যেখানে এক এক রাউটারে এনক্রিপশন আউটপুট এক এক রকম। সবশেষে ডেটা যখন প্রাপকের হাতে গিয়ে পৌছায় তা তখন ডিএনক্রিপশন প্রসেসের মাধ্যমে আদি অবস্থানে ফিরে আসে।

ডার্ক ওয়েব অপরাধের একটি অভয়ারণ্য। সেখানে এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে হেরোইন, মার্জুয়ানা থেকে শুরু করে নানা ধরনের মাদক হোম ডেলিভারী দেওয়া হয়। আরও কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে জঙ্গী গ্রুপগুলো তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পালন করে। কীভাবে বোমা বানাতে হয়, নিক্ষেপ করতে হয়, বারুদ বানাতে হয়, বারুদ লোড করতে হয় ইত্যাদি শেখানো হয়ে থাকে সেসব ওয়েবসাইটে। কিছু সাইটে রেডিমেইড অস্ত্রও পাওয়া যায়, রকেট লাঞ্চার, একে ৪৭, মর্টার ইত্যাদি। ডার্ক ওয়েবে এমন অনেক সাইট আছে যেখানে ভারাটে খুনীও পাওয়া যায়। টাকার বিনিময়ে খুন করবে কিন্তু কেউ কারো পরিচয় জানবে না। ডার্ক ওয়েবে নানা ধরনের মেইল ও চ্যাট সার্ভিস আছে যেগুলো দিয়ে পরিচয় গোপন করে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এখানে কেনাবেচার জন্য কোনো ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড ব্যবহার করা হয় না। এখানে ব্যবহার করা হয় বিটকয়েন। ১ বিটকয়েনের মুল্য প্রায় সাড়ে ১০ ইউরো। বিটকয়েনের ব্যবহার এই ডার্ক ওয়েবকে করেছে আরও নিরাপদ। এর ফলে সহজেই কেউ কাউকে ধরতে পারবে না। 

এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে সবার মনে, এতো অনৈতিক কাজ হয় এখানে তবু CIA, FBI এরা কিছুই করে না। এর উত্তর হলো ডীপ ওয়েবের নেটওয়ার্ক এতই গভীর যে FBI, CIA এরা কিছুই করতে পারে না। ডীপ ওয়েবে কেউ কাউকে চেনে না, কারো পরিচয় কেউ জানে না, কেউ কারো আইপি ট্রেস করতে পারে না। আর এজন্যই এখানে সবকিছুই নির্ভয়ে চলে। তবে কেউ যদি ডীপ ওয়েবের ডেটা এনক্রিপসন এবং ডিএনক্রিপসন দুপ্রান্তে নজরদারি করতে পারে তবে সে নিশ্চিত হতে পারবে ডেটা সেন্ডার বা রিসিভারের লোকেশন কোথায়।

তবে ডীপ ওয়েবের কিছু ভালো দিকও আছে। অনেক ভালো মানুষও এখানে তথ্য আদান প্রদান করে। Wikileaks এর শুরুই হয়েছিল এই ডীপ ওয়েবে। তবে এখানকার প্রায় ৯৯%- ই খারাপ।