আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

সোমবার, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩

দি ইলিগ্যান্ট ইউনিভার্সঃ সুপারস্ট্রিংস, হিডেন ডাইমেনশনস অ্যান্ড দ্যা কোয়েস্ট ফর দি আলটিমেট থিউরি


পদার্থবিজ্ঞানের দিগন্তে ‘দুখন্ড মেঘ জমেছে। আধুনিক (কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা বুঝাতে নয়) পদার্থবিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে দু'টি মৌলিকস্তম্ভের উপর। একটি হচ্ছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা আরেকটি হচ্ছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স। আপেক্ষিকতা এখন শুধুমাত্র একটা থিউরিই নয় বরং বৃহৎ আকারের বস্তু যেমন নক্ষত্র, নীহারিকা, নীহারিকাগুচ্ছ এমনকী পুরো মহাবিশ্বের সম্প্রসারনশীলতা ব্যাখ্যা করার জন্য একটা ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। একই কথা প্রযোজ্য কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বেলাতেও, তবে সেটা ক্ষুদ্রতর বস্তুর বেলায় যেমন অনু, পরমানু ও অন্যান্য আন্তঃআনবিক কণিকাগুলো। মজার ব্যাপার হলো দুটো স্তম্ভই একটুও নড়বড়ে নয় বরং আধুনিককালের পরীক্ষাগুলোতে খুব ভাল ভাবেই পাশ করেছে দুটোই। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে দুটোই একসাথে ঠিক হতে পারেনা!
হয়তো অবাক হচ্ছেন ‘কেন'? উত্তরটা খুব কঠিন কিছু নয়। বিজ্ঞানীরা এখনো কোনকিছু ব্যাখ্যা করতে গেলে দ্বারস্থ হচ্ছে হয় আপেক্ষিকতার নইলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিন্তু একই সাথে দুইটার নয়। আমরা বিবেচনা করছি বস্তুটি বৃহদাকার নইলে খুব ক্ষুদ্রাকার, কিন্তু মহাবিশ্বে যখন একই বস্তু দুইটা অবস্থায় দেখা দিবে তখন?

এর উদাহরণ খুব অসম্ভব নয়, কৃষ্ণবিবরের (ব্ল্যাক-হোল) কেন্দ্র, যেখানে অতি বিশাল পরিমাণ ভর খুব ক্ষুদ্র আকার ধারন করে। অদ্বৈত-বিন্দু (সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট) যেটা নিজে আণুবীক্ষণিক কিন্তু সেখান থেকেই আজকের এই কল্পনাতীত রকমের বিশাল মহাবিশ্ব। এই উদাহরণগুলো ইঙ্গিত দেয়, অতি ক্ষুদ্র কিন্তু অকল্পনীয় ভরের বস্তুর বেলায় আমাদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স, আপেক্ষিকতা দু'টোই দরকার পড়বে। কিন্তু শক্ত দুটো স্তম্ভ দুটোকে একসাথে করে যে নতুন সমীকরনিক স্তম্ভ পাই তা হয়ে যায় গ্রামের সস্তা কাঠ-বাঁশ দিয়ে গড়া নড়বড়ে সেতুর মত। দুটোই ঠিকঠাক কাজ করছিলো, চমৎকার উত্তর দিচ্ছিল, কিন্তু একসাথে দাঁড়িয়ে আবার যা উত্তর দেয় তা মোটেও পছন্দনীয় নয়। কৃষ্ণ-বিবর আর অদ্বৈত-বিন্দুর রহস্য বাদ দিয়েও চিন্তা করতে গেলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ নেই। চিন্তা করুন, যে মৌলিক বস্তুকণাগুলো দিয়ে একটা বৃহদাকার বস্তু গঠিত তা ব্যাখ্যা করার জন্য যে সমীকরণ কাজ করছে সেগুলোই আবার মৌলিক বস্তুকণাগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ল্যাদর-প্যাদর করছে। কেন এমনটা হবে? সত্যিই কি এদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দুই সেট সমীকরণের প্রয়োজন?
কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও আপেক্ষিকতার তুলনায় অনেক নতুন এক থিউরি, সুপারস্ট্রিং থিউরি হাত তুলে উত্তর দেয়, কিছু যদি না মনে করেন তবে আমার মনে হয় উত্তর হবে "না"। মহাবিশ্বের ব্যাখ্যার এই নতুন রাস্তা পদার্থবিদ ও গণিতবিদদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও আপেক্ষিকতার মধ্যে সংঘাত নিরসনে যথেষ্ট আশা জাগিয়েছে। শুধু তাই নয়, সুপারস্ট্রিং থিউরি আরও দেখায় এই নতুন ফ্রেমওয়ার্কে আপেক্ষিকতা বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নয় বরং দুটোরই প্রয়োজন। অর্থাৎ বড়র সূত্রগুলো আর ক্ষুদ্রর সূত্রগুলো মিলনে যা জন্ম হয় তাই সুপারস্ট্রিং থিউরি।
স্ট্রিং থিউরি, কোয়ান্টাম-আপেক্ষিকতার বন্ধন কে বেশ কিছু অতি-বিশাল পদক্ষেপ অতিক্রমে সাহায্য করেছে। তিন দশক ধরে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন চেষ্টা করেছিলেন এমন একটা তত্ত্ব খুঁজে বের করার যা বিশ্বের সব বল ও বস্তুকে ব্যাখ্যা করতে পারবে। তিনি বিফল হন। আজ এই নতুন শতকের প্রথমে স্ট্রিং থিউরি সেই পুরনো আইনস্টাইনের স্বপ্নকে ফিরিয়ে এনে ঘোষণা করছে অবশেষে আমরা সেই ইউনিফাইড থিউরির প্রান্তে। স্ট্রিং থিউরির বলছে, কোয়ার্কের দুলুনি থেকে বাইনারি স্টারের পরিক্রমন, সামান্য অগ্নিপিণ্ড থেকে বিগ-ব্যাং অথবা ঘূর্ণায়মান ঘড়ির কলগুলো থেকে বিশাল নীহারিকা পর্যন্ত ব্যাখ্যা করবে একটাই গ্র্যান্ড ফিজিক্যাল প্রিন্সিপাল, একটাই সব-জান্তা শমসের সমীকরণ।
যেহেতু স্ট্রিং থিউরি স্থান,সময়,বস্তু ইত্যাদির ধারনার আমূল পরিবর্তন আনে তাই এর সাথে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে খানিক সময় লাগবে, আরও খানিক সময় লাগবে নিউটোনিয়ান মেকানিক্সের মত একে সহজে বুঝতে। স্ট্রিং থিউরি শুধু কোয়ান্টাম-আপেক্ষিকতার মাঝেই সমন্বয় সাধন করেনি, নিরসন করেছে আরও বেশ কিছু সমস্যার। আসলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং আপেক্ষিকতার সংঘর্ষই প্রথম নয় বরং এটা তিন নম্বরে পড়ে, এর আগে পদার্থবিজ্ঞানে আরও দুইটি উল্লেখযোগ্য অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়, যা আমাদের মহাবিশ্বকে বোঝার ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনে।
তিন অসামঞ্জস্যতা প্রথমটি দেখা দেয় ১৮ শতকের দিকে, আলোর গতি সংক্রান্ত ব্যাপারে। আইজ্যাক নিউটনের তত্ত্বে আমরা দেখতে পাই উসাইন বোল্ট যদি একসময় খুব খুব খুব বেশী জোড়ে দৌড়াতে শুরু করে তবে একসময় আলোকেও ধরে ফেলতে পারে, শুধু সেকেন্ডে ৩*১০^৮ মিটারের চেয়ে বেশী দূরত্ব অতিক্রম করতে পারলেই হল। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় সূত্রগুলো থেকে দেখা যায় এটা সম্ভব নয়, নাহ উসাইন বোল্টের ভাগ্য খারাপ। এটার সমাধান করেন আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিকতা থিউরির মাধ্যমে। বিশেষ আপেক্ষিকতা অনুসারে স্পেস এবং সময় এমন একটা পাত্রে রাখা পাথরের মত অপরিবর্তনীয় কিছু নয় এবং যা সকলের কাছে একরূপ মনে হবে বরং স্পেস,সময় নমনীয় চাদরের মত যার উপস্থিতি ও উৎপত্তি নির্ভর করে কোনোকিছুর গতীয় অবস্থার উপর।
দ্বিতীয় অসামঞ্জস্যতার বীজ বিশেষ আপেক্ষিকতার মাঝে নিহিত ছিল। বিশেষ আপেক্ষিকতার অন্যতম উপসংহার ছিল কোন বস্তু এমনকি কোন প্রতিক্রিয়া আলোর চেয়ে বেশী গতিতে হতে পারে না। কিন্তু নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বে দেখা যায় অনেক দূরে অবস্থিত দুটি বস্তুর মাঝে মধ্যাকর্ষন ক্রিয়া করে কল্পনাতীত দ্রুততায়। আবার ত্রাণকর্তা আইনস্টাইন, ১৯১৫ সালে তিনি তার বিখ্যাত সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে সম্পূর্ণ নতুন মধ্যাকর্ষন ধারনার অবতারণা ঘটান। বিশেষ আপেক্ষিকতার মতই সাধারণ আপেক্ষিকতাও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। এখানে বলা হল কোন বস্তু অথবা শক্তির উপস্থিতি স্পেস-টাইম কে শুধু প্রভাবিত করেনা, ভাঁজ এবং বাঁকাতেও সক্ষম। আর এই স্পেস-টাইম চাদরের প্রভাবনই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মহাকর্ষ বল পরিবহন করে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো স্পেস-টাইম আর এমন কিছু নয় যেখানে মেসি ফুটবল খেললে স্পেস-টাইম চুপচাপ দর্শকের ভূমিকায় থাকবে, বরং বিশেষ আপেক্ষিকতা ও সাধারণ আপেক্ষিকতার মধ্যে দিয়ে বলা যায় ঘটনাটা হবে ফুটবল এবং মেসির উপস্থিতিতে স্পেস-টাইম নিজেদের মধ্যে একটু খেলে নিবে।
আবার সেই পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, সাধারণ আপেক্ষিকতা একটা অসামঞ্জস্যতার নিরসন করে এবং আরেকটি জন্ম দেয়। ১৯৯০ এর পরবর্তী ৩ যুগ ধরে পদার্থবিদরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নামের নতুন আরেক ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলেন, আণুবীক্ষণিক বস্তুকণা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে। এর এই কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও সাধারণ আপেক্ষিকতার তাত্ত্বিক বিরোধ থেকে, তৃতীয় এবং সবচেয়ে গভীর অসামঞ্জস্যতার জন্ম হয়। দেখা গেলো বস্তুর আণুবীক্ষণিক ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যাতে আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের মাঝে দা-কুমড়ো সম্পর্ক। আশির দশকের মধ্যের দিকে স্ট্রিং থিউরি একটা সম্ভাবনাময় উপায় আনার আগ পর্যন্ত এই অসামঞ্জস্যতাকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ‘কেন্দ্রীয় সমস্যা' বলা হতো। বিশেষ ও সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের উপর গড়ে উঠলেও স্ট্রিং থিউরির নিজস্ব কিছু ধারনা স্পেস-টাইমের আগের ধারনার সাথে যুক্ত করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক, আমাদের ধারনা ছিল মহাবিশ্ব ত্রিমাত্রিক কিন্তু স্ট্রিং থিউরি এর চাইতে আরও অনেক বেশী সংখ্যক মাত্রার ধারনা দেয় যেগুলো মহাজাগতিক চাদরের মাঝে খুব সূক্ষ্মভাবে বাঁকানো ও মুচড়ানো।
স্ট্রিং থিউরি সঠিকভাবে বুঝতে হলে আমাদের খানিক পিছন ফিরে তাকানো দরকার এবং দেখা নেয়া দরকার মহাবিশ্বের আণুবীক্ষণিক গঠন সম্পর্কে গত কয়েক শতকে লব্ধ ধারনাগুলো।
প্রাচীন গ্রীকরা এইরূপ ধারণায় পৌঁছেছিল যে সকল বস্তু এক "অবিভাজ্য" (অকর্তনযোগ্য) কণা দ্বারা গঠিত। এটা এখনকার বিজ্ঞান মানদণ্ডে ঠিক বৈজ্ঞানিক ধারনা ছিল না, ছিল শুধুই একটা আন্দাজ মাত্র। এটা আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগের ধারনা কিন্তু আজও আমরা একে সঠিক বলেই জানি যদিও সেই অবিভাজ্য কণাটির ধারনা দিন দিন বদলেছে। যাকে অবিভাজ্য ধরা হয়েছিলো পরে তারও বিভাজন সম্ভব হয়েছে। ১৯ শতকের দিকে বিজ্ঞানীরা দেখলেন পরিচিত কণাগুলোর মাঝে কার্বন অথবা অক্সিজেনের আকার সবচেয়ে ছোট, তাই তারা গ্রীকদের ধারনার উপর ভিত্তি এদেরকে নামকরণ করলেন ‘অ্যাটম' যার অর্থ অবিভাজ্য। এই নাম থেকে যায় কিন্তু অ্যাটমের উপাধি পাওয়া কণাগুলো পরিবর্তন হতে থাকে, অ্যাটম-মুকুট মাথা বদল হতে থাকে। ১৯৩০ সালের মধ্যে রাদারফোর্ড,বোর, চ্যাডউইক প্রতিষ্ঠা করেন পরমাণুর সৌর-মডেল। এ মডেল থেকে আমরা জানলাম, পরমাণুর কেন্দ্রে আছে নিউক্লিয়াস যা আবার প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে গঠিত আর বাইরে আছে ইলেকট্রন।
পদার্থবিজ্ঞানীরা আবার ধারনা করলেন এই ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রনই গ্রীকদের সেই কল্পিত অ্যাটম। কিন্তু এই তিনের কপালেও সুখ সইল না, ১৯৬৮ সালে স্ট্যানফোর্ড লাইনার অ্যাকসেলারেটর কেন্দ্রে এক পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় নিউট্রনও অবিভাজ্য কিছু নয়, বরং এরা ক্ষুদ্রতর আরেক কণিকা কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। পরীক্ষণটি আরও প্রমাণ করে কোয়ার্ক দুধরনের যথা আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্ক। প্রোটন দুটি আপ ও একটি ডাউন কোয়ার্ক নিয়ে গঠিত আর নিউট্রন দুটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্ক নিয়ে গঠিত। আমরা যা দেখি এই স্বর্গে-মর্ত্যে সবই এই আপ কোয়ার্ক, ডাউন কোয়ার্ক ও ইলেকট্রন দিয়ে গঠিত বলে ধারনা করা হচ্ছে। কোন পরীক্ষণ নির্ভর গবেষণা এদের বিভাজ্যতা এখনো দেখাতে পারেনি কিন্তু ১৯৫০ এর দিকে ফ্রিডরিক-ক্লাইড এক পরীক্ষা থেকে দেখেন এই তিন ধরনের কণিকা (ঠিক তিন ধরনের নয়, বরং কোয়ার্কের দুই রকম অবস্থাকে আলাদা করে বুঝানো হচ্ছে) ছাড়াও আরও এক কণিকার সন্ধান পান, এর নাম ‘নিউট্রিনো' যা ১৯৩০ সালের দিকে বিজ্ঞানী পলি ভবিষ্যৎবাণী করেন। নিউট্রিনো খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর, কারণ এরা ভুতুড়ে কণিকা, কারো সাথে তেমন কোন আন্তঃ প্রতিক্রিয়া করে না। একটা সাধারণ শক্তিসম্পন্ন নিউট্রিনো ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন মাইল অতিক্রম করার পরও এর গতিপথে হালকা পরিবর্তনও ঘটে না। মজার ব্যাপার হল এটা আমাদের জন্য এক বিরাট স্বস্তির কারণ, ঠিক যখন এই লেখাটি পড়ছেন সূর্য কর্তৃক নিক্ষেপিত নিউট্রিনো আপনার শরীর ও পৃথিবী ভেদ করে চলে যাচ্ছে। ১৯৩০ সালেরই শেষের দিকে পদার্থবিদরা মহাজাগতিক রশ্মি নিয়ে গবেষণাকালে আবিষ্কার করেন আরেকটা কণিকা, মুউন। মুউন ইলেকট্রনের মতই, শুধুমাত্র এর ভর ইলেকট্রনের চেয়ে ২০০ গুন ভারী। মজার ব্যাপার হল মহাজাগতিক রশ্মিতে এমন কোন অমীমাংসিত রহস্য ছিল না যা ব্যাখ্যা করতে মুউনের প্রয়োজন হয়। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ আইজ্যাক রাভি তো মুউন আবিস্কার হওয়ার পর বলেছিলেন "Who ordered that particle?" কিন্তু বাস্তবতা হল মুউন সত্যি ছিল এবং আরও অনেক কণিকাই ছিল আবিষ্কৃত হওয়ার অপেক্ষায়। বিজ্ঞানীরা আরও শক্তিশালী প্রযুক্তি দিয়ে, আরও অধিক শক্তিসম্পন্ন বস্তুর সংঘর্ষের মাধ্যমে খুঁজতে থাকেন, আর কোন কণিকা পাওয়া যায় কিনা। আর তালিকায় যোগ হতে থাকে নিত্য নতুন কণিকা, বিজ্ঞানীরা পেলেন আরও চার ধরনের কোয়ার্ক। চার্ম,স্ট্রেঞ্জ, বটম ও টপ কোয়ার্ক। আরও পেলেন ইলেকট্রনের চেয়ে ভারী এর খালাতো ভাই ট্যাও কণিকা। এখানেই শেষ নয়, নিউট্রিনোর সমরূপী আরও দুটি কণিকা পাওয়া গেলো এদের নাম মুউন-নিউট্রিনো,ট্যাও-নিউট্রিনো। এখন প্রত্যেকটির আবার প্রতি-কণিকা (অ্যান্টি-পার্টিকেল) রয়েছে, যাদের ভর একই কিন্তু চার্জ ভিন্ন। উদাহরণ হিসেবে দেয়া যেতে পারে, পজিট্রন, ইলেকট্রনের অ্যান্টি পার্টিকেল যার ভর ইলেকট্রনের সমান কিন্তু এর চার্জ +১ যেখানে ইলেকট্রনের চার্জ -১। কোন কণিকা ও এর প্রতি-কণিকা সংঘর্ষ করে বিশুদ্ধ শক্তিতে (পুরো ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়) পরিণত হয়। একারণেই আমাদের চারপাশে খুব কম সংখ্যকই প্রতি-কণিকা পাওয়া যায়।
Particles and their masses
এই কণিকাগুলোকে প্রধানত তিনটা পরিবারে ভাগ করা যায়। প্রত্যেকটা পরিবারে আছে দুইটি করে কোয়ার্ক, একটি করে ইলেকট্রন বা এর চাচাতো ভাই এবং একটা করে নিউট্রিনো প্রজাতির কণিকা। উপরের ছক একবার দেখেই আপনারও অবস্থা আইজ্যাক রাভির মত হবে। অনেকগুলো প্রশ্ন জাগবে মনে। বিশেষ করে যখন চিন্তা করতে যাবেন এই পুরো-মহাবিশ্ব গড়তে শুধু কেন ইলেকট্রন আর আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্ক প্রয়োজন? কেন মাত্র তিনটা পরিবার? কেন এক পরিবার বা চার পরিবার কিংবা অন্য কোন সংখ্যার হল না? কেন এই কণিকাগুলোর ভরগুলো এমন অনিয়মিত? কেনইবা ট্যাও কণিকা ইলেকট্রনের চেয়ে ৩৫২০গুন ভারী? কেন টপ কোয়ার্ক, আপ কোয়ার্কের চেয়ে ৪০,২০০ গুন ভারী? এই সংখ্যাগুলো দৃশ্যত অদ্ভুত ও অনিয়মিত। প্রশ্ন জাগে এমন কেন? শুধুই দৈবাৎ কারণে? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কোথায়?
আবার বল নিয়ে চিন্তা করলে জটিলতা আরও বাড়ে। আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ঘটনাগুলোতে দেখি, ব্যাট দিয়ে একটা ক্রিকেট বল মারা যেতে পারে, একজন সেনা-জওয়ান কোমরে দড়ি বেঁধে লাফিয়ে পড়তে পারে অনেক উঁচু স্থান থেকে, চুম্বক একটা অতি দ্রুতবেগে ধাবমান রেলগাড়িকে এর ধাতব পাতের রাস্তা থেকে উপরে ধরে রাখতে পারে। গিগার-কাউন্টার যন্ত্র তেজস্ক্রিয় বস্তুর উপস্থিতিতে বিক্ষেপ দেখাতে পারে, আণবিক বোমা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ সহকারে ফাটতে পারে। ধাক্কা,ঠেলা বা ঝাঁকি দেয়ার মাধ্যমে; পুড়িয়ে বা অন্য জ্বলন্ত বস্তুর মাঝে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে; আঘাত করে,বাঁকিয়ে কিংবা ভেঙ্গে ফেলার মাধ্যমে; শীতলীকরণের অথবা উত্তপ্ত করার মাধ্যমে আমরা বস্তুর অবস্থাকে প্রভাবিত করি। গত কয়েক শতকের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এখন জানেন প্রতিদিন ঘটে যাওয়া এরকম বিলিয়ন বিলিয়ন ঘটনার পিছনে কলকাঠি নাড়ে মাত্র চারটি প্রাথমিক বল। এদের একটা মহাকর্ষ বল, বাকি তিনটা হল তড়িৎ-চুম্বকীয় বল, দুর্বল বল ও সবল বল।
Four forces and masses of their associated particles
বিজ্ঞানীরা এই চারটি বলের মধ্যে একটা সাধারণ ব্যাপার আবিষ্কার করেছেন। এই সকল বল এর পেছনে একটা করে পরিবাহী কণিকা রয়েছে, যাদেরকে সংশ্লিষ্ট বলের সবচেয়ে ছোট থলি হিসেবে কল্পনা করা যায়। আপনি যদি একটা লেজার রশ্মি-ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রশ্মি ছুড়ে দেন তাহলে সেটা আর কিছুই না ফোটন কণার স্রোত, এই ফোটন হচ্ছে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক বলের সবচেয়ে ছোট থলি। এভাবে দুর্বল ও সবল নিউক্লীয় বলের সাথে জড়িত কণার নাম যথাক্রমে দুর্বল গেজ বোসন ও গ্লুউন। ১৯৮৪ মধ্যেই এদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষ বলের ক্ষুদ্রতম থলের নাম দিয়েছেন গ্রাভিটন। এর পরীক্ষন নির্ভর অস্তিত্ব এখনো প্রমানিত হয়নি।
আরেকটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য এদের মাঝে দেখা যায় তা হল, কোন কিছুর ভর নির্ধারণ করে একে মহাকর্ষ কীভাবে প্রভাবিত করবে, বৈদ্যুতিক চার্জ নির্ধারণ করে কীভাবে এর উপর ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক বল ক্রিয়া করবে এবং এর দুর্বল চার্জ ও সবল চার্জ নির্ধারণ করবে এর উপর দুর্বল ও সবল নিউক্লীয় বলের ক্রিয়া
particles of matter and charge distribution
এই টেবিল দেখে আমরা জানতে পারি কণিকাগুলোর ভর ও চার্জের সম্পর্কিত তথ্যগুলো। কিন্তু কারো কাছে উত্তর নেই ঠিক কেন এই কণিকাগুলোর ভর ও চার্জ এরকম!