আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন!!

আমরা কোন স্প্যাম পাঠাবোনা। ওয়াদা।

সোমবার, মার্চ ১৭, ২০১৪

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পরমানু রাজ্য::[পর্ব--৫]


বলেছিলাম পরমাণুর বেডরুমের খবর দেব। সেখানে প্রথম সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন রাদারফোর্ড, কিন্তু তার ফোকাসটা ঠিক খাটে না হয়ে খাটের পাশের বেডসাইড টেবিলটাতে হয়ে গিয়েছিল। সেই ফোকাসটা লাইনে আনেন “নীলস বোর”, করতে গিয়ে পরমাণুতেও ঢুকিয়ে দেন কোয়ান্টাম ধারণা। রাদারফোর্ড ভেবেছিলেন পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রন যেখানে খুশি সেখানে ঘুরপাক খায়। বোর ভাবলেন উল্টোটা। তিনি বললেন নির্দিষ্ট কিছু স্থান ছাড়া ইলেকট্রন থাকতে পারবে না। তারমানে ইলেকট্রনের শক্তিও যা ইচ্ছে তাই নয়, কাটা কাটা, সুনির্দিষ্ট কিছু শক্তি তার জন্য বরাদ্দ। অমুক শক্তির ইলেকট্রন মানে অমুক স্থান বা স্তরের ইলেকট্রন। এই স্তরগুলোর নাম দেয়া হল শক্তিস্তর(Energy Level)। ল্যাবরেটরীর যন্ত্রগুলো বোরের ব্যাক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাস কিংবা অলৌকিকত্ব নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায়নি। তাদের থেকে পাওয়া তথ্য তাই সমর্থন করল বোরকেই। 
একটা বহুতল ফ্লাটে গেলে কোথায় থাকবেন? নিশ্চয় দোতালা কিংবা তেতলা, নয়তো পাঁচতলা, নাহয় সাততলায়।  কেউ কি কখনও বলবেন যে আড়াইতলায় যাচ্ছি, কিংবা- পৌনে দশতলায় চায়ের দাওয়াত? মোটেই না। এখন  ইলেকট্রনরাও তো মানুষ, নাকি? আর তাদের ফ্লাটবাড়ি হল পরমাণু। ইলেকট্রনেরাও সেখানে একতলা, দোতলা তেতলার মত কাটা কাটা জায়গায় (আরও সঠিকভাবে বললে শক্তিস্তরে) থাকে। আপনি যেমন সোয়া পাঁচতলার ভাবীর সঙ্গে খেজুরে আলাপ জুড়ে দিতে পারেন না, ইলেকট্রনও তেমনি তার “নির্ধারিত” শক্তিস্তরের বাইরে থাকতে পারে না। কোন আসবাববহুল ঘরে একটা দস্যি পিচ্চি ছেড়ে দিলে কি হতে পারে? প্রথমে সে টুলে উঠবে, সেখান থেকে খাট, খাট থেকে টেবিল, চাইকি সেখান থেকে আলমারির মাথায়। হয় সে টেবিলে চড়ে বসে মহানন্দে বই ছিড়বে, নয়তো আলমারির মাথায় উঠে মাড়ি বের করে হাসতে হাসতে পিসু করার মহতী পরিকল্পনা হাতে নেবে। কিন্তু খাট আর টেবিলের মাঝে অনন্তকাল ঝুলে থাকার অপশন কিন্তু নাই। ইলেকট্রনের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার, মাঝামাঝি বলে কিছু নেই- হয় এখানে, নয়তো ওখানে।

আগেই বলেছিলাম- আলো অদ্ভুদ! তার যেমন নাচানাচির অভ্যাস আছে, তেমন গুঁতোগুঁতিরও অভ্যাস আছে। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে বৈকি। কিন্তু দিনশেষে সে শক্তির একটা রূপ, চাইলে সে সেটা নিজের কাছে রাখতে পারে, কিংবা উইল করে (সুযোগমত) কাউকে দিয়েও দিতে পারে। তাই দেখা যায় কখনওবা আলো নাচতে নাচতে এসে ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেয়। ইলেকট্রন আবার সেই শক্তিটুকু গাপুস করে গিলে নিয়ে শক্তিশালী হয়, তারপর সেই শক্তি ব্যাবহার করে পরের স্তরে উঠবার চেষ্টা করে। তবে এখানে কথা আছে, ইলেকট্রন মোটেই পেটুক নয়। সব আলোকেই সে গপ করে গিলে ফেলে না। তার যতটুকু দরকার, ঠিক ততখানি পেলে তবেই নেয়। ধরলাম একটা ইলেকট্রন দোতালায় আছে, তেতলায় যেতে তার লাগবে ৫ মাত্রার শক্তি। এখন যদি ৪, ৫ ও ৬ মাত্রার তিনখানা আলো এসে তাকে গুঁতোয়, তখন দেখা যায়- ৪ কিংবা ৬ কে সে পাত্তাই দেয়না। কিন্তু খপ করে ধরে ফেলে ৫ নাম্বারকে, তারপরে উঠে যায় উপরে। একে বলে বিশোষণ (Absorption)। কখনও আবার সেখানে ভাল না লাগলে ইলেকট্রন ফিরে আসে আগের ধাপে। তখন আবার সে ঠিক ততখানি শক্তি ফিরিয়ে দেয় আলো হিসেবে। একে বলে স্বতঃস্ফুর্ত নিঃসরণ (Spontaneous Emission)। 
[বিদ্রঃ হুমায়ুন আহমেদের কোন এক লেখায় জানি একটা ভুতের বাচ্চা ছিল। সে বাঁচত আলো খেয়ে। কি বুঝলেন? ভূত “রূপকের” আড়ালে নিশ্চয় হু.আ. আসলে ইলেকট্রনের কথাই বলে গিয়েছেন। অর্থাৎ, ভদ্রলোক বিজ্ঞানসম্মত।]

এতক্ষণ যা বললাম তার সারমর্ম হলঃ
 ইলেকট্রন চাইলেই পরমাণুর ভেতর যেকোনো জায়গায় ল্যাটা মেরে বসে পরতে পারে না। কাটা কাটা “সুনির্দিষ্ট” কিছু জায়গাতেই কেবল সে থাকতে পারে।
 এই কাটা জায়গাগুলোর শক্তিও সুনির্দিষ্ট। এই শক্তিগুলোই ইলেকট্রনের ইউনিক গেটপাস। অর্থাৎ ঠিক অতখানি শক্তি থাকলে সে ঠিক অমুক তলায় থাকতে পারবে। 
 ইলেকট্রন বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট পরিমান শক্তি নিয়ে নিচ থেকে উপরের তলায় যেতে পারে। কিংবা প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট পরিমান শক্তি ফেরত দিয়ে ওপর থেকে নিচের তলায় (খালি থাকা সাপেক্ষে) নামতেও পারে।
এখন একেক রঙের আলোর শক্তি আবার একেক রকম। যেটুকু আমরা দেখি তার মাঝে, লাল রঙ সবচাইতে ল্যাড়ব্যাড়ে, কমলা তার চাইতে একটু শক্তিশালী। হলুদ কিংবা সবুজ রঙের শক্তি মাঝারী। সবচেয়ে শক্তিশালী নীল বা বেগুনী রঙের আলো। আবার একেক পদার্থের ফ্লাটগুলির উচ্চতা কিন্তু একেক রকম। হাইড্রোজেনের একতলা-দোতলার যে মাপ, অক্সিজেনের একতলা-দোতলার ঠিক একই মাপ নয়। এই দুটো তথ্য জোড়া দিয়েই বিজ্ঞানীরা পদার্থদের আলাদা করেন। আগে বিজ্ঞানের আধখাপচা বই পড়ে অবাক হতাম, বিজ্ঞানীদের আশেপাশে তো কোনও দেবদূতের আনাগোনা দেখা যায়না। তবে, তাঁরা বলেন কি করে যে- সুর্যে আছে হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম? বলল আর হয়ে গেল! হুহ। এখন অবশ্য জানি যে সুর্যে কি আছে তা জানতে সুর্যকে ছুঁয়ে দেখতে হয়না। পরমাণুর হাঁড়ির খবর জানলেই চলে- যেটা এখন জেনে গেলেন আপনারাও।

বিজ্ঞানীরা ঠিক কি করেন, সেটা আরেকটু বুঝিয়ে বলি। প্রথমে তাঁরা নানান রঙের আলো দিয়ে একটা পদার্থের পরমাণুকে গুতিয়ে দেখেন। এসময় দেখা যায় এক-দু’খানা আলো গায়েব, অর্থাৎ ইলেকট্রন খেয়ে ফেলেছে, বাকিগুলোর কিছু হয়নি। বিজ্ঞানীরা সূক্ষ্মভাবে চিহ্ন দিয়ে রাখেন যে ঠিক কি কি রঙের আলো খেয়ে ফেলল পদার্থটি। এভাবে বিভিন্ন পদার্থের আলো খেয়ে ফেলার যে মানচিত্র আঁকা হয় তাকে বলে- বিশোষণ বর্নালী (Absorption Spectra)। এর পর বিজ্ঞানীরা যন্ত্রপাতি নিয়ে অসভ্যের মত, বিরক্ত পরমাণুদের দিকে তাকিয়ে থাকেন- অপেক্ষা করেন কখন সে ওই আলো ফেরত দেয়। ফেরত দেয়া মাত্র বিজ্ঞানীরা তাকে মেপেটেপে অস্থির করেন। ফেরত আসা আলোর তথ্য দিয়ে পরমাণুদের  যে মানচিত্র আঁকা হয় তাকে বলে নিঃসরণ বর্নালী (Emission Spectra)। এই দু’জাতের বর্নালীই হল পরমাণুদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট। গোয়েন্দা ঝাকানাকা যেমন আঙ্গুলের ছাপ দেখেই মুহূর্তের মাঝে বুঝে যান কোনটা কিঙ্কু চৌধারী আর কোনটা বদরু খাঁ, বিজ্ঞানীরাও তেমনি বর্নালী দেখেই বিলক্ষন চিনে ফেলেন কোনটা সোডিয়াম আর কোনটা সিজিয়াম। প্রতিটি পদার্থের বর্ণালী সম্পুর্ন আলাদা। কখনও অপরিচিত কোনও বর্নালী পেলে বোঝা যায় যে নতুন কোনও পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

সবশেষে আবার বোরের গল্প- এবার বিজ্ঞানের নয়, জীবনের। বোরের সদর দরজায় ঝুলানো থাকত একটা ঘোড়ার নাল। (এটা নিতান্তই কুসংস্কার, সেদেশে তা ছিল সৌভাগ্য ও শান্তির প্রতীক)। এই না দেখে এক ত্যাঁদড় লোক বোরকে জিজ্ঞাসা করেছিলঃ “কি, বিজ্ঞানী সাহেব, খুব তো বড় বড় কথা, দরজায় ওটা ঝুলছে কেন? শান্তি পাচ্ছেন বুঝি।” রসিক বোর জবাব দিয়েছিলেনঃ “আমার মানসিক শান্তি বজায় রাখতে ওটার কানাকড়ি কৃতিত্বও নেই। তবে কি, গৃহশান্তি বজায় রাখতে ওটার অবদান আছে বৈকি। তাছাড়া ওটা কারও কোনও ক্ষতি করছে না।” অর্থাৎ পরিবারের চাপেই বোর এমন অবৈজ্ঞানিক কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তবে তার কাজে কেউ নাক গলাতে আসত না। আহা, বোরের মত দরজায় একখানা নাল ঝুলিয়েও যদি নিস্তার পেতাম। নিচুস্তরের বিজ্ঞানী ছিলেন তো, তাই বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য ছিলঃ “পদার্থবিজ্ঞানে আমরা ইশ্বরকে নিয়ে কথা বলতে আসিনি, এসেছি যা জানি তাই নিয়ে আলোচনা করতে। ইশ্বরকে নিয়ে কথা বলতে চাইলে আমাদের ভিন্ন পরিবেশে তা বলতে হবে।” নিম্নমানের বিজ্ঞানীরা এভাবেই সোজাসাপ্টা কথা মূখের ওপর বলে ফেলেন। জনৈক ভারতীয় টিভি নায়কও অবশ্য শান্তির মায়ের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়া টিভি চ্যানেলে আজকাল বিজ্ঞান (যদিও বিজ্ঞান তার নিতান্তই অপছন্দের বিষয়, তাতে কি) নিয়ে কথা ব

5 মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

jotil hoiche vai.

Unknown বলেছেন...

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। পোস্ট পড়ার জন্য।

সজিব বলেছেন...

ভাই আপনার আসল নাম কি?

Unknown বলেছেন...

কাজী কামরুজ্জামান ইমন।

Unknown বলেছেন...

অপেক্ষা করেন একটু...