প্রায় বেশির ভাগ মানুষই এই মহান গনিত বিদের নাম জানিনা।আর এই মহান গনিতবিদ হলেন এভারিস্ত গ্যালোয়া,যিনি একজনফরাসি গণিতবিদ। গ্যালোয়ার জন্ম ২৫অক্টোবর, ১৮১১। ১৪ বছর বয়সে গনিতের সাথে তার প্রথম পরিচয় ঘতে । তিনিই গ্রুপ থিউরির জনক । তাঁর কশির কাছে লেখা একটি চিঠিতে তিনি প্রমাণ করেন যে, পঞ্চম বা তার বেশি মাত্রার পলিনমিয়ালের সাধারণ সমাধান মূলকের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আবিষ্কারটি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তিনি যে উপায়ে প্রমাণ করেন সেই উপায়টি। যেদিন প্রথম ক্লাশে গনিত পড়ানো হয়, তার মধ্যে যেন একটা বিপর্যয় ঘটে যায় । তিনি গনিতে এতই মজে ছিলেন যে, অন্য সব কিছু পড়া একেবারে ছেড়ে দিলেন। সব কিছুতে খুব খারাপ করতে লাগলেন । আগে তেমন খারাপ ছাত্র ছিলেন না, ল্যাটিন ভাষায় দক্ষতার জন্য পুরস্কারও পেয়েছিলেন , কিন্তু এখন অন্য বিষয় গুলোতে তার পাশ করার বেশ কঠিন হয়ে গেল।
গনিত চর্চায় এতই এগিয়েছিলেন ,যে তার হঠাত মনে হওয়া শুরু হল, যে তাকে গনিতে শেখানর মত স্কুলের শিক্ষকদের কাছে আর অবশিষ্ট কিছুই নেয় । ফলে নিজেই নিজের মত বই কিনে গনিত চর্চা শুরু করলেন । কিন্তু এইবার ভিন্ন সমস্যা শুরু হল। গ্যালোয়া যেই পরিমানে গনিত বুঝেন , তত গনিত আসলেও তার শিক্ষকরাও বুঝতেন না । ফলে পরিক্ষার খাতায় গ্যালোয়া যা উত্তর করেন তার কিছুই তাদের বোধগম্য হত না । এবার গ্যালোয়া গনিতেও খারাপ করা শুরু করলেন। ১৮২৮ সালে তিনি École Polytechnique নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন। এটা ছিলো গনিতের জন্য ততকালীন ফ্রান্সের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠান । এরই মধ্যে তিনি পড়ে ফেলেছেন Adrien Marie Legendre' এর Éléments de Géométrie, Joseph Louis Lagrangeএর Réflexions sur la résolution algébrique des équations (এটি পরবর্তিতে তাকে ইকুয়েশন থিওরীতে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলে), Leçons sur le calcul des fonctions ইত্যাদি । কিন্তু মৌখিক পরিক্ষায় গিয়ে তিনি পরীক্ষকদের কোন প্রশ্নের উত্তরেই সন্তুষ্ট করতে পারলেন না । আসলে তিনি তাদেরকে উত্তর এমন অল্পকথায় ব্যাখ্যা ছাড়া দিয়েছিলেন যে কেউ তা বুঝতে পারে নি । ফলে তিনি École Polytechnique তে ভর্তি হতে ব্যর্থ হন। পরে তিনি অপেক্ষাকৃত নিম্ন র্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালয় 'École préparatoire তে ভর্তি হন সেই বছর। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ গ্যালোয়া তার সমস্ত জিদ যেন ঢেলে দেন গনিতের উপরে । তুমুল উৎসাহে মেতে ওঠেন ত্রিঘাত, চতুর্ঘাত আর পঞ্চঘাত সমীকরনে । ১৮২৯ সালে তার প্রথম গবেষনা পত্র প্রকাশ হয় Annales de mathematiquesএ continuous fraction এর উপরে । অনেক পরিস্রম করে ২ টি রিসার্চ পেপার তৈরি করে জমা দেন Academy of Sciencesএ । তখন Academy of Sciences. এর প্রধান ছিলেন বিখ্যাত গনিতবিদ Augustin Louis Cauchy । পেপার দুটির জন্য তিনি নিজেই সুপারিশ করেছিলেন।কিন্তু পেপার গুলো তেমন সাজানো ছিলনা।তাই তিনি গ্যালোয়ার কাছে পেপার দুটি ফেরত পাঠান পুনর্বিন্যাস ও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে লেখার জন্য । বছর ঘুরতেই(১৮২৯) রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গ্যালোয়ার বাবা আত্মহত্যা করেন। পিতার মৃতদেহ সতকার করে গ্যালোয়া প্যারিস ফিরলেন,পরে পেপার দুটোর কাজ শেষ করে তার পেপার দুটি জমা দিলেন একাডেমির সেক্রেটারি স্যার জোসেফ ফুরিয়ারে কাছে । কিন্তু সেবার গ্যালোয়া পুরস্কার পান নি । পুরস্কার ঘোষনার কিছু দিন আগে ফুরিয়ার মারা যান এবং তার পেপার যে জমা হয়েছে এমন কোন ডকুমেন্টের অস্তিত্বই ছিল না । ফলে রাজনৈতিক কারনে গ্যলয়ার পেপার গায়েব হয়েছে বলে তার সন্দেহ হল । এই সন্দেহ পুরোপুরি বাস্তবে প্রমানিত হল যখন তার পরে একাধিক গবেষনা পত্র একাডেমি অফ সায়েন্স ফেরত পাঠাল অযৌক্তিক ও অবোধ্য এর খোড়া যুক্তি দেখিয়ে (১৮৩০)। সে বছর গ্যালোয়া মোট ৩টি গবেষনা পত্র প্রকাশ করেন , যার মধ্যে একটি বিখ্যাত Galois theory এর ভিত্তি গরে দেয় , অন্য দুইটি ছিল আধুনিক উপায়ে সমিকরনের মুল নির্নয় সম্পর্কিত এবং নাম্বার থিওরি নিয়ে । শেষক্তটি বেশ গুরুত্ববাহি কারন finite field এর এর ধারনা প্রথম এখানে পাওয়া যায় । সে বছর গ্যালোয়া তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টরকে গালিগালাজ করে একটি প্রতিবেদন লেখেন । ডিরেক্টর ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক। সুতরাং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয় । এর পর তিনি যেন পুরোই উচ্ছনে গেলেন । বছর ঘুরতেই(১৮৩১) মদ আর সন্ত্রাস তার নিত্যসঙ্গী। কখনও চাকু হাতে সম্রাটকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন খোলা রাস্তায়, তো পরক্ষনে গ্রেফতার। ছাড়া পেয়ে আবার নিষিদ্ধ ন্যাশ্নাল গার্ডের পোশাক পরে রাস্তায় বের হলে তার জেল হয়ে যায় । এক মাস পর গ্যালোয়া জেল থেকে ছাড়া পান । কিছুদিন পর তার প্রনয়ের খবর চাঊর হয়ে গেল। প্রয়সী স্টাফানি ফেলিসি । স্টাফানি এক বিখ্যাত ডাক্তারের মেয়ে, প্যারিসের এক সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলে পেশ্চু ডি’হেরবিনভিল এর বাগদত্তা । পেশ্চু এই ঘটনায় খুব রেগে গেলেন। অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শুটিং ডুয়েলের চ্যালেঞ্জ দেন গ্যালোয়াকে । ডুয়েলের আগের রাতে(১৮৩২) নিজের মৃত্যু সম্পর্কে গ্যালোয়া এতই নিশ্চিত ছিলেন যে সারারাত জেগে তার থিওরেমগুলো লিখে ফেলেন। তার সে রাতের কাজের মধ্যে দিয়ে আলোর মুখ দেখে গ্রুপ থিওরি। সাথে একটি চিঠি লিখেন যে তার যদি পরদিন ডুয়েলে মৃত্যু হয় তাহলে যেন তার কাজগুলোকে ইউরোপের বড় বড় গনিতবিদদের কাছে পৌছে দেয়া হয়। পরদিন,৩০মে,১৮৩২, ডুয়েলে গ্যালোয়াকে নিখুত নিশানায় ভুলুন্ঠিত করে । ৩১মে মৃত্যু হয় মহান গনিতবিদ গ্যালোয়ার । কিন্তু মাত্র একরাতে গ্যালোয়া যা লিখছিলেন তার মর্ম উদ্ধার করতে গাউস,জ্যাকোবিদের অনেক গলদঘর্ম হতে হয়েছে । গ্যালোয়ার মৃত্যুর ১৪ বছর পর, ১৮৪৬ সালে লিউভিল সেই কাগজগুলো থেকে যে থিওরি উদ্ধার করেন তা তিনি গ্যালোয়ার থিওরি নামে প্রকাশ করেন । তার কাজের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে গ্যালোয়া থিওরি এবং গ্রুপ থিওরি, যা কিনা Abstract Algebra এর দুটি প্রধান শাখা ।আর,এভাবেই রাজনীতির রোষানলে পরে মহান গনিতবিদ এভারিস্ত গ্যালোয়ার জিবনাসন ঘটে।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন